সহীহ নূরানি নামাজ শিক্ষা (একের ভেতর সব)
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
জামাআতের সহিত নামায আদায়
---===---
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَآتُواْ الزَّكَاةَ وَارْكَعُواْ مَعَ الرَّاكِعِينَ (سورة البقرة: ৪৩)
অর্থ:
“তোমরা নামায সুপ্রতিষ্ঠিত কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।” সূরা আল বাকারা, আয়াত: ৪৩ জামাআতের সাথে নামায পড়ার আগ্রহ ও উৎসাহ প্রদানে এবং তার ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে, অপর দিকে জামাআত বর্জন ও জামাতের সাথে নামায আদায়ে
অবহেলাকারীর বিরুদ্ধেও তার অবহেলার ক্ষেত্রে সতর্কতকারী হাদীস এসেছে।
ইসলামের কিছু ইবাদত একত্রিত ও সম্মিলিতভাবে করার বিধান রয়েছে। এ বিষয়টি ইসলামের উত্তম বৈশিষ্ট্যসমূহের একটি বলা যায়। যেমন, হজপালনকারীরা হজের সময় সম্মিলিতভাবে হজ পালন করেন, বছরে দু’বার ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আযহায় (কুরবানী ঈদে) মিলিত হন এবং প্রতিদিন পাঁচবার জামাআতের সাথে নামায আদায় করার উদ্দেশ্যে একত্রিত হন।
নামাযের জন্য এই দৈনিক সম্মিলন মুসলিমদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ, সহযোগিতা এবং সুন্দর সম্পর্ক স্থাপনের প্রশিক্ষণ দেয়। এটি মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ, সহযোগিতা, পরিচিতি, যোগাযোগ এবং প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
জামাআতের সহিত নামায মুসলিমদের মধ্যে সাম্য, আনুগত্য, সততা এবং প্রকৃত ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। কেননা ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা, ছোট-বড় একই স্থানে ও কাতারে দাঁড়ায়, যা দ্বারা আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়। দ্বন্দ্ব, বিচ্ছিন্নতা, বর্ণ-জাতি, স্থান ও ভাষাগত গোঁড়ামি বিলুপ্ত হয়।
জামাআতের সহিত নামায কায়েমের মধ্যে রয়েছে মুসলিমদের সংস্কার, ঈমানের পরিপক্কতা ও তাদের মধ্যে যারা অলস তাদের জন্য উৎসাহ প্রদানের উপকরণ। জামাতের সাথে নামায আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীন প্রকাশ পায় এবং কথায় ও কর্মে মহান আল্লাহর প্রতি আহ্বান করা হয়, জামাআতের সাথে নামায কায়েম ঐ সকল বৃহৎ কর্মের ন্তর্ভুক্ত যা দ্বারা বান্দাগণ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং এটি মর্যাদা ও নেকি বৃদ্ধির কারণ।
জামায়াতে নামাজ আদায়ের সময় অনেকেই এই ৯টি ভুল করে
জামায়াতে নামাজ আদায়ের সময় অনেক ব্যক্তি জেনে বা না জেনে কিছু ভুল করে থাকেন। যে ভুলগুলোকে অনেকে আবার ভুলও মনে করেন না। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে যারা নিয়মিত নামাজ পড়েন তারাও অবলীলায় এসব ভুল করে থাকেন। ভুল করতে করতে এমন অবস্থা হয়েছে যে,
এখন এ ভুলগুলোকেই সঠিক নিয়ম বলে মনে হয়।
১। তাড়াহুড়া করে অজু করা:
অজুর ফরজ চারটি। মুখমণ্ডল ধৌত করা, উভয় হাত কনুইসহ ধোঁয়া, মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করা এবং উভয় পা টাখনুসহ ধোয়া। এগুলো সঠিকভাবে আদায় করতে হবে। হাত-পা, মুখমণ্ডলের নির্দিষ্ট স্থানে পানি পৌঁছাতে হবে। কোনো জায়গা শুকনো থাকলে অজু হবে না। তাই তাড়াহুড়া করে অজু না করা ভালো। অজু শেষে কালেমা শাহাদাত পড়া যেতে পারে। হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু শেষে কালেমা শাহাদাত পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হয়। সে ইচ্ছা করলে এর যে কোনো দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করতে পারবে।’ -মুসলিম শরিফ
অজুর ফরজ চারটি। মুখমণ্ডল ধৌত করা, উভয় হাত কনুইসহ ধোঁয়া, মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করা এবং উভয় পা টাখনুসহ ধোয়া। এগুলো সঠিকভাবে আদায় করতে হবে। হাত-পা, মুখমণ্ডলের নির্দিষ্ট স্থানে পানি পৌঁছাতে হবে। কোনো জায়গা শুকনো থাকলে অজু হবে না। তাই তাড়াহুড়া করে অজু না করা ভালো। অজু শেষে কালেমা শাহাদাত পড়া যেতে পারে। হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু শেষে কালেমা শাহাদাত পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হয়। সে ইচ্ছা করলে এর যে কোনো দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করতে পারবে।’ -মুসলিম শরিফ
২। নামাজের জন্য দৌড়ে যাওয়া:
অনেকেই নামাজের জন্য মসজিদে দৌড়ে যান। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্রুত হাঁটা দৌঁড়ের কাছাকাছি বা দৌঁড় দিয়েও অনেকে নামাজে পৌঁছে হাঁপাতে হাঁপাতে কাতারে দাঁড়িয়ে যান। এই হাঁপানো অবস্থাতেই এক রাকাতের মতো চলে যায়। এটা আল্লাহর রাসূল (সা.) পছন্দ করেননি। তিনি নিষেধ করেছেন। আপনি হয় সময় নিয়ে নামাজ পড়তে যাবেন অথবা ধিরস্থির ও শান্তভাবে হেঁটে গিয়ে যতটুকু জামাতে শরিক হতে পারেন হবেন এবং বাকি নামাজ নিজে শেষ করবেন।
অনেকেই নামাজের জন্য মসজিদে দৌড়ে যান। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্রুত হাঁটা দৌঁড়ের কাছাকাছি বা দৌঁড় দিয়েও অনেকে নামাজে পৌঁছে হাঁপাতে হাঁপাতে কাতারে দাঁড়িয়ে যান। এই হাঁপানো অবস্থাতেই এক রাকাতের মতো চলে যায়। এটা আল্লাহর রাসূল (সা.) পছন্দ করেননি। তিনি নিষেধ করেছেন। আপনি হয় সময় নিয়ে নামাজ পড়তে যাবেন অথবা ধিরস্থির ও শান্তভাবে হেঁটে গিয়ে যতটুকু জামাতে শরিক হতে পারেন হবেন এবং বাকি নামাজ নিজে শেষ করবেন।
৩। ফজরের সুন্নতে তাড়াহুড়া করা:
ফজরের নামাজের জামাতে অংশ নেয়ার জন্য ফজরের ফরজের আগের সুন্নত নামাজ সংক্ষিপ্তভাবে শেষ করে জামাতে ইমামের সঙ্গে দাঁড়ানোর চিত্র হরহামেশাই দেখা যায়। এমন অযাচিত তাড়াহুড়া নিষেধ, এমন অবস্থায় করণীয় সম্পর্কে হাদিসে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে এবং সেটাই মান্য। সেই নির্দেশনা হলো, যদি কেউ ফজরের জামাতের আগে মসজিদে যেতে পারেন তাহলে প্রথমে সুন্নত দুই রাকাত পড়ে জামাতের জন্য অপেক্ষা করবেন। আর যদি দেরি হয়ে যায় এবং জামাত শুরু হয়ে যায় তাহলে প্রথমে মসজিদে গিয়ে ইমামের সঙ্গে জামাতে শামিল হতে হবে এবং জামাতের পর বাকি নামাজ (যদি থাকে) শেষ করতে হবে।
ফজরের নামাজের জামাতে অংশ নেয়ার জন্য ফজরের ফরজের আগের সুন্নত নামাজ সংক্ষিপ্তভাবে শেষ করে জামাতে ইমামের সঙ্গে দাঁড়ানোর চিত্র হরহামেশাই দেখা যায়। এমন অযাচিত তাড়াহুড়া নিষেধ, এমন অবস্থায় করণীয় সম্পর্কে হাদিসে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে এবং সেটাই মান্য। সেই নির্দেশনা হলো, যদি কেউ ফজরের জামাতের আগে মসজিদে যেতে পারেন তাহলে প্রথমে সুন্নত দুই রাকাত পড়ে জামাতের জন্য অপেক্ষা করবেন। আর যদি দেরি হয়ে যায় এবং জামাত শুরু হয়ে যায় তাহলে প্রথমে মসজিদে গিয়ে ইমামের সঙ্গে জামাতে শামিল হতে হবে এবং জামাতের পর বাকি নামাজ (যদি থাকে) শেষ করতে হবে।
থাকল ছুটে যাওয়া সুন্নত। এবার আপনি অপেক্ষা করবেন সূর্য উদয়ের জন্য এবং সূর্য উদয়ের পর নামাজের নিষিদ্ধ সময় (সাধারণত সূর্য উদয়ের পর ২০মিনিট) পার হওয়ার পর আপনি ফজরের সুন্নত নামাজ আদায় করবেন। মধ্যবর্তী যে সময় সে সময় আপনি হয় মসজিদে বসে
অপেক্ষা করতে পারেন অথবা ঘরেও ফিরে আসতে পারেন এবং সময় হওয়ার পরই আপনি ফজরের সুন্নত আদায় করে নেবেন। এটাই আল্লাহর রাসূল (সা.) নির্দেশিত নিয়ম।
৪। কাতার পূর্ণ না করে নতুন কাতার করা:
সামনের কাতারে দাঁড়ানোর জায়গা আছে। সে জায়গায় না দাঁড়িয়ে অনেকেই নতুন কাতার শুরু করেন। ফলে কাতারের ডান কিংবা বাম দিক অপূর্ণ থাকে। মুসল্লি থাকা সত্ত্বেও কাতার পূর্ণ হয় না। এভাবে কাতার অপূর্ণ রাখা ঠিক নয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কাতার মিলিত করে আল্লাহ তার সঙ্গে সম্পর্ক জুড়ে দেন, আর যে ব্যক্তি কাতার বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহ তার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেন।’ -নাসায়ি
সামনের কাতারে দাঁড়ানোর জায়গা আছে। সে জায়গায় না দাঁড়িয়ে অনেকেই নতুন কাতার শুরু করেন। ফলে কাতারের ডান কিংবা বাম দিক অপূর্ণ থাকে। মুসল্লি থাকা সত্ত্বেও কাতার পূর্ণ হয় না। এভাবে কাতার অপূর্ণ রাখা ঠিক নয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কাতার মিলিত করে আল্লাহ তার সঙ্গে সম্পর্ক জুড়ে দেন, আর যে ব্যক্তি কাতার বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহ তার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেন।’ -নাসায়ি
৫। মানুষ ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া:
সামনের কাতারে নামাজ পড়লে সওয়াব বেশি। হয়তো এ কারণে শুক্রবার কিংবা রমজানে তারাবির নামাজে এসে একদল মানুষ চাপাচাপি করে সামনে গিয়ে বসে। জায়গা না থাকা সত্ত্বেও অনেকটা আরেকজনের গায়ের ওপর বসে পড়ে। এতে আরেক মুসল্লির কষ্ট হয়। এটা ইসলামসম্মত নয়। কারণ এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে কষ্ট দিতে পারে না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান ওই ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। আর প্রকৃত মোমিন সেই ব্যক্তি যাকে মানুষ নিজেদের জীবন ও ধনসম্পদের ব্যাপারে নিরাপদ এবং নির্বিঘ্ন মনে করে।’ -তিরমিজি ও নাসায়ি
সামনের কাতারে নামাজ পড়লে সওয়াব বেশি। হয়তো এ কারণে শুক্রবার কিংবা রমজানে তারাবির নামাজে এসে একদল মানুষ চাপাচাপি করে সামনে গিয়ে বসে। জায়গা না থাকা সত্ত্বেও অনেকটা আরেকজনের গায়ের ওপর বসে পড়ে। এতে আরেক মুসল্লির কষ্ট হয়। এটা ইসলামসম্মত নয়। কারণ এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে কষ্ট দিতে পারে না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান ওই ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। আর প্রকৃত মোমিন সেই ব্যক্তি যাকে মানুষ নিজেদের জীবন ও ধনসম্পদের ব্যাপারে নিরাপদ এবং নির্বিঘ্ন মনে করে।’ -তিরমিজি ও নাসায়ি
৬। কাতারে জায়গা নির্দিষ্ট করে রাখা:
অনেকে আবার অনেক জায়গা নিয়ে নামাজে দাঁড়ান। একটু চেপে যদি আরেক মুসলমান ভাইকে দাঁড়ানোর জায়গা দেয়া যায়, তবে সেটা ভালো নয় কি? মসজিদ আল্লাহর ঘর। এখানে সবার অধিকার সমান। মুরব্বি দোহাই দিয়ে সামনের কাতারে জায়গা রাখা ঠিক নয়। জায়নামাজ বিছানো কিন্তু লোক নেই। জিজ্ঞেস করলে জানা যায়, অমুক সাহেব জায়গা রেখে গেছেন। এটা ঠিক না। এমন কাজ খুবই খারাপ।
অনেকে আবার অনেক জায়গা নিয়ে নামাজে দাঁড়ান। একটু চেপে যদি আরেক মুসলমান ভাইকে দাঁড়ানোর জায়গা দেয়া যায়, তবে সেটা ভালো নয় কি? মসজিদ আল্লাহর ঘর। এখানে সবার অধিকার সমান। মুরব্বি দোহাই দিয়ে সামনের কাতারে জায়গা রাখা ঠিক নয়। জায়নামাজ বিছানো কিন্তু লোক নেই। জিজ্ঞেস করলে জানা যায়, অমুক সাহেব জায়গা রেখে গেছেন। এটা ঠিক না। এমন কাজ খুবই খারাপ।
৭। তাকবিরে তাহরিমা না পড়ে রুকুতে যাওয়া:
প্রচলিত আরেকটি ভুল হলো, তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহ আকবার) না বলে রুকুতে চলে যাওয়া। অর্থাৎ জামাতের নামাজে ইমাম যখন রুকুতে যান, তখন অনেককে দেখা যায় যে রাকাত পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করে একটি তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলতে বলতে রুকুতে চলে যান এ পদ্ধতি সঠিক নয়। কারণ যে তাকবিরটি বলতে বলতে মুসল্লি রুকুতে যাচ্ছে, সেটাকে রুকুর তাকবির বলা যায়। তাহলে তার তাকবিরে তাহরিমা তো আদায় হয়নি। অথচ তাকবিরে তাহরিমা ফরজ।
প্রচলিত আরেকটি ভুল হলো, তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহ আকবার) না বলে রুকুতে চলে যাওয়া। অর্থাৎ জামাতের নামাজে ইমাম যখন রুকুতে যান, তখন অনেককে দেখা যায় যে রাকাত পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করে একটি তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলতে বলতে রুকুতে চলে যান এ পদ্ধতি সঠিক নয়। কারণ যে তাকবিরটি বলতে বলতে মুসল্লি রুকুতে যাচ্ছে, সেটাকে রুকুর তাকবির বলা যায়। তাহলে তার তাকবিরে তাহরিমা তো আদায় হয়নি। অথচ তাকবিরে তাহরিমা ফরজ।
অতএব ইমামকে রুকুতে পেতে হলে কয়েকটি কাজ করা জরুরি। প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে একবার আল্লাহু আকবার উচ্চারণ করবে। তারপর হাত না বেঁধে সোজা ছেড়ে দিবে। অতপর আরেকটি তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলতে বলতে রুকুতে যাবে।
৮। ছানা পড়া নিয়ে বিভ্রান্তি:
অনেকেই ভাবেন ইমামকে রুকুতে পেলে ছানা পড়তে হবে কি না- বিষয়টি নিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগেন। বস্তুত ছানা পড়া সুন্নত। নামাজে নিয়ত বাঁধার পর প্রথম কাজ হলো ছানা পড়া। কেউ একা পড়ুক বা জামাতে নামাজ পড়ুক, উভয় অবস্থায় ছানা পড়তে হয়। ইমাম আস্তে কেরাত পড়া অবস্থায় ইমামের সঙ্গে নিয়ত বেঁধে ছানা পড়তে পারে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। আর ইমাম জোরে কেরাত পড়া অবস্থায় কেরাত শুনা ফরজ বিধায় তখন ছানা পড়া নিষেধ। কিন্তু এক্ষেত্রে অনেকের যে ভুলটা হয়ে থাকে তা হলো, ইমামকে যদি রুকুতে পায় তাহলে প্রথমে তাকবির বলে হাত বাঁধে তারপর দ্রুত ছানা পড়ে রুকুতে যায়। অনেক সময় ছানা পড়তে পড়তে ইমামের রুকু শেষ হয়ে যায় ফলে ওই রাকাত ছুটে যায়। এটা ঠিক নয়। এ অবস্থায় ছানা পড়তে হবে না, হাতও বাঁধতে হবে না।
অনেকেই ভাবেন ইমামকে রুকুতে পেলে ছানা পড়তে হবে কি না- বিষয়টি নিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগেন। বস্তুত ছানা পড়া সুন্নত। নামাজে নিয়ত বাঁধার পর প্রথম কাজ হলো ছানা পড়া। কেউ একা পড়ুক বা জামাতে নামাজ পড়ুক, উভয় অবস্থায় ছানা পড়তে হয়। ইমাম আস্তে কেরাত পড়া অবস্থায় ইমামের সঙ্গে নিয়ত বেঁধে ছানা পড়তে পারে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। আর ইমাম জোরে কেরাত পড়া অবস্থায় কেরাত শুনা ফরজ বিধায় তখন ছানা পড়া নিষেধ। কিন্তু এক্ষেত্রে অনেকের যে ভুলটা হয়ে থাকে তা হলো, ইমামকে যদি রুকুতে পায় তাহলে প্রথমে তাকবির বলে হাত বাঁধে তারপর দ্রুত ছানা পড়ে রুকুতে যায়। অনেক সময় ছানা পড়তে পড়তে ইমামের রুকু শেষ হয়ে যায় ফলে ওই রাকাত ছুটে যায়। এটা ঠিক নয়। এ অবস্থায় ছানা পড়তে হবে না, হাতও বাঁধতে হবে না।
নিয়ম হলো, প্রথমে দাঁড়ানো অবস্থায় দু’হাত তুলে তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলে হাত ছেড়ে দেবে, তারপর দাঁড়ানো থেকে তাকবির বলে রুকুতে যাবে। এক্ষেত্রে অনেকে আরেকটি ভুল করে থাকেন সেটা হলো, ইমাম রুকুতে চলে গেছে দেখে দ্রুত রুকুতে শরিক
হয়ে রাকাত ধরা দরকার, তা না করে এ সময়ও আরবিতে উচ্চারণ করে নিয়ত পড়তে থাকে। ফলে ওই রাকাত পায় না। এটা আরও বড় ভুল। নিয়তের বিষয়ে আলেমরা বলেন, নিয়ত অর্থ সংকল্প করা, যা মনে মনে হলেই চলবে। উচ্চারণ করে নিয়ত পড়ার কোনো প্রয়োজন নেই। -রদ্দুল মুহতার: ১/৪৮৮
৯। নামাজী ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাওয়া:
ফরজ নামাজের পর অনেকে হুমড়ি খেয়ে পড়েন মসজিদ থেকে বের হওয়ার জন্য। জুমার পর তো রীতিমতো হুড়াহুড়ি লেগে যায়। ফরজের পর অনেকেই সুন্নত পড়তে দাঁড়িয়ে যান। তাদের সামনে দিয়ে অনেকেই অবাধে চলে যান। এটা ঠিক না। নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাওয়া সমীচীন নয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নামাজের সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত এতে কী পরিমাণ পাপ রয়েছে, তবে তার সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করার চেয়ে ৪০ বছর দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম হতো। হাদিসের বর্ণনাকারী আবু নসর বলেন, আমার মনে পড়ে না ৪০ দিন না ৪০ মাস, না ৪০ বছর বলেছেন।’ -সহিহ বোখারী
ফরজ নামাজের পর অনেকে হুমড়ি খেয়ে পড়েন মসজিদ থেকে বের হওয়ার জন্য। জুমার পর তো রীতিমতো হুড়াহুড়ি লেগে যায়। ফরজের পর অনেকেই সুন্নত পড়তে দাঁড়িয়ে যান। তাদের সামনে দিয়ে অনেকেই অবাধে চলে যান। এটা ঠিক না। নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাওয়া সমীচীন নয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নামাজের সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত এতে কী পরিমাণ পাপ রয়েছে, তবে তার সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করার চেয়ে ৪০ বছর দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম হতো। হাদিসের বর্ণনাকারী আবু নসর বলেন, আমার মনে পড়ে না ৪০ দিন না ৪০ মাস, না ৪০ বছর বলেছেন।’ -সহিহ বোখারী
জামায়াত ও মসজিদে নামাজ আদায়
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, স্মরণ কর, সে চরম সংকটময় দিনের কথা, সেদিন তাদের সিজদা করার জন্য আহবান করা হবে অথচ তারা (তা করতে) সক্ষম হবে না। হীনগ্রস্ত হয়ে তারা তাদের দৃষ্টি অবনত করবে। অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল তখন তো তাদের আহবান করা
হয়েছিল সিজদা করতে। (আল-ক্বালাম)
আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন: আমার ইচ্ছে করে কিছু যুবক একত্রিত করে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে আদেশ দেই এবং ঐ সব লোকদের নিকট যাই যারা মসজিদে জামায়াতে উপস্থিত হয় না, আর তাদের বাড়ি ঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেই। (মুসলিম,আবু
দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)
মুসলিম শরীফে আছে- এক অন্ধ ব্যক্তি নবী করীম (সাঃ) এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূল্লাল্লাহ! আমাকে মসজিদে নিয়ে যাবার মত কোন লোক নেই এবং সে নবী করীম (সাঃ) এর কাছে ঘরে নামাজ আদায় করার অনুমতি চাইলো। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। সে চলে যেতে
উদ্যত হলে তিনি তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে তোমাকে ঐ আযানে সাড়া দিতে হবে অর্থাৎ মসজিদে এসে জামায়াতে শরীক হতে হবে। (মুসলিম)
এ প্রসঙ্গে ঈমাম আবূ দাঊদ (রঃ) অন্ধ সাহাবী আমর ইবনে উম্মে মাকতুম (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি একবার নবী করীম (সাঃ) এর কাছে আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মদীনায় সাপ-বিচ্ছু ও নানা প্রকার হিংস্র জন্তুর প্রাদুর্ভাব রয়েছে। এছাড়া আমি
চোখে দেখতে পাই না (অন্ধ) এবং বাড়ি ও দূরে। এবং যে আমাকে মসজিদে নিয়ে আসবে তাকে আমার পছন্দ হয় না। এমতাবস্থায় আমি আমার ঘরে নামাজ পড়তে পারব কি? তিনি বললেন, তুমি কী আযান শুনতে পাও? বললেন,হ্যা, শুনতে পাই। নবী করীম (সাঃ) বললেন, তোমাকে জামায়াতে আসতে হবে। তোমার জন্য
কোন প্রকার বিশেষ বিবেচনার অবকাশ নেই। (পরবর্তীতে তিনি বাড়ি থেকে মসজিদ পর্যন্ত রশি ঝুলিয়ে নিয়েছিলেন এবং রশি ধরে ধরে জামায়াতে হাজির হতেন। (আবূ দাঊদ)
ফায়দা ঃ
এ লোকটি অন্ধ, মসজিদে যাতায়াতে অসুবিধা এবং মসজিদ নিয়ে যাওয়ার মত কোন লোক না থাকা সত্ত্বে ও নবী করীম (সাঃ) তার ঘরে নামাজ পড়ার অনুমতি দেন নি। সুতরাং যে লোক চোখে দেখতে পায় এবং সুস্থ-সবল তার জন্যে জামায়াত তরক করা হলো- এক ব্যক্তি
দিনে রোযা রাখে, রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করে কিন্তু জামায়াতে নামাজ পড়ে না, তার কি অবস্থ হবে? উত্তরে তিনি বললেন: যদি সে এ অবস্থায় মারা যায় তাহলে সে জাহান্নামে যাবে। (তিরমিযী)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাজের আযান শুনে এবং জামায়াতে যেতে তার কোন প্রকার ওযরও নেই অথচ সে ঘরে নামাজ পড়ে তার নামাজ কবূল হবে না। জিজ্ঞেস করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি
যে ওযরের কথা বলেছেন তা কি? তিনি বললেন: ভয় অথবা কোন রোগ। (আবূ দাউদ)
হাকিম (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তিন শ্রেণীর লোককে আল্লাহ তায়ালা অভিশাপ দিয়েছেন-
১. যে কোন গোত্রের নেতৃত্ব করে অথচ লোকেরা তাকে পছন্দ করে না।
২. ঐ মহিলা যে তার স্বামীকে নাখোশ রেখে রাত কাটায়।
৩. ঐ লোক যে ডাক (আযান) শুনে কিন্তু তাতে সাড়া দেয় না (অর্থাৎ জামায়াতে শরীক হয়না। (মুসনাদে আহমদ)
হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন: মসজিদের প্রতিবেশীর জন্য মসজিদ ছাড়া অন্যত্র নামাজ পড়লে সে নামাজ হয় না। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, মসজিদের প্রতিবেশী কে? তিনি বললেন, যে আযান শুনতে পায়। (মুসনাদে আহমদ)
জামায়াত ছাড়া কখন জায়েয
* সতর ঢাকার মত কাপড় না থাকলে
* প্রচণ্ড প্রাকৃতিক দুর্যোগ
* প্রচণ্ড শীতের কারণে প্রাণনাশ বা রোগবৃদ্ধির আশংকা
* শত্রর কবলে পড়ার আশংকা
* ঘোর অন্ধকারের কারণে পথ দেখা না গেলে
* প্রচন্ড অসুস্থ বা অসুস্থের সেবাকারী (যদি অন্য কেউ না থাকে)
* মালপত্র হারিয়ে যাওয়ার আশংকা হলে
* প্রচন্ড পেশাব পায়খানার বেগ হলে
* যাত্রাকালে গাড়ি ছেড়ে দেয়ার ভয় থাকলে।
জামায়াতে নামাজ পড়ার নিয়ম
জামায়াতে নামাজ পড়ার সময় ঈমামের অনুসরণ করার নিয়ত করতে হয়। ঈমাম জোহর ও আসর নামাজে আস্তে কেরাত পড়বে। এছাড়া বাকি সমস্ত নামাজে উচ্চস্বরে কেরাত পড়বে। মুক্তাদীগণ (যারা ঈমামের অনুসরণ করে নামাজ পড়ে) প্রত্যেক রাকাতেই চুপচাপ শুধু শ্রবণ করবে
কিছু পড়বেনা। ঈমাম সাহেব ছামিয়াল্লা-হুলিমান্ হামিদাহ বলে রুকু থেকে সোজা হলে মুক্তদীরা রব্বানা লাকাল্ হাম্দ ও হাম্দান কাসীরান্ তয়্যিবান মোবা-রকান্ ফীহি পড়বে। এছাড়া বাকি সমস্ত রুকন আদায়ের সময় ঈমামের সাথে সাথে মুক্তাদীকেও আস্তে তাকবীর বলতে হবে। মুক্তাদীকে অবশ্যই
খেয়াল রাখতে হবে যেন ঈমামের সামনে দাঁড়ানো না হয় এবং কোন রুকন ঈমামের আগে আদায় না হয়ে যায়।
ঈমামতির নিয়ত
আমি আল্লাহর ওয়াস্তে কিবলামুখী হয়ে; যারা উপস্থিত আছে এবং যারা এখনও উপস্থিত হয়নি সকল মুক্তাদিদের ঈমামতির নিয়ত করছি। আল্লা-হু আক্বার।
মহিলাদের জামায়াত
মহিলাদের জন্য মসজিদের গিয়ে জামায়াতে নামাজ পড়ার চেয়ে বাড়ির ভিতর নামাজ পড়া উত্তম। ইসলামের প্রথম যুগে মহিলারা মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামাজ আদায় করতেন। কিন্তু পরবর্তী যুগে বিভিন্ন প্রকার ফিতনা ফ্যাসাদ ব্যপক হওয়ার কারণে খুলাফায়ে রাশেদীন
ও সাহাবায়ে কিরাম একমত হয়ে মহিলাদের মসজিদ গমনের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। যেহেতু ঘরে নামাজ পড়া মহিলাদের জন্য সর্বাধিক নিরাপদ, তাই মহিলাদের ঘরে নামাজ পড়াই অধিক যুক্তিযুক্ত। বরং মহিলাদের জন্য ঘরের যে কোন স্থানে পড়া অপেক্ষা ঘরের একেবারে নিভৃতে নির্জন স্থানে
নামাজ পড়ার অনেক বেশি সওয়াব রয়েছে। তবে যদি কোন স্থানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যথাযথ পর্যবেক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের দ্বারা চলাচল সম্পূর্ণভাবে ফিতনা মুক্ত ও নিরাপদ হয় তবে মহিলাদের জামায়াতে নামাজ পড়তে কোন অসুবিধা নেই।
মাসবুকের নামাজ
মাসবুক বলা হয় যার ঈমামের সাথে জামায়াতে নামাজ পড়ার সময় এক বা একাধিক রাকাত ছুট গেছে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি ঈমামের এক বা একাধিক রাকাত শেষ হওয়ার পর (সালাম ফেরানোর পূর্বেই) ঈমামের অনুসরণ করার নিয়ত করে নামাজ শুরু করে তাকে মাসবুক বলে। মাসবুক
ঈমামের সাথে যে রাকাতের রুকু পেয়েছে সে রাকাত পুরোটাই পেয়েছে বলে গণ্য হবে। যে রাকাতের রুকু পায় নি সে রাকাত আদায় করে নিতে হবে।
ছুটে যাওয়া রাকাত সমূহ আদায় করার নিয়ম হল, প্রথমে কিরাত বিশিষ্ট রাকাতসমূহ তারপর কিরাত বিহীন রাকাত আদায় করবে। ঈমামের সাথে আদায়কৃত রাকাতগুলোর হিসেবে বৈঠক করতে হবে। যেমন, যোহরের নামাজে ঈমামের তিন রাকাত হয়ে যাওয়ার পর কোন ব্যক্তি শরীক
হলে সে ঈমামের উভয় সালাম শেষ হওয়ার পর আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়িয়ে ছানা, আঊযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, সূরা ফাতেহা পড়ে কিরাত পড়বে। অত:পর রুকু সিজদা করত: প্রথম বৈঠক করবে এবং তাশাহুদ পড়বে। ( কারণ সে ঈমামের সাথে এক রাকাত পেয়েছিল। এখন তার দুই রাকাত হল)। অতঃপর দ্বিতীয় রাকাতের
জন্য দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহা ও কিরাত পড়ে রুকু সিজদা করবে। (ঈমামের সাথে এক রাকাত সহ এখন তিন রাকাত হল )। তৎপর তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহা পড়ে রুকু সিজদা করে শেষ বৈঠক করতে হবে (এটা চতুর্থ রাকাত) । (ফাতাওয়া ও মাসাইল)
এমনিভাবে কারো যদি মাগরিবের প্রথম রাকাত ছুটে যায় তবে ঈমামের সালাম ফিরানোর পর দাঁড়িয়ে ছানা,সূরা ফাতিহা, কিরাত পড়ে রুকু সিজদা করে শেষ বৈঠক করতে হবে। যদি ফজরের দুই রাকাতের কোন রাকাত না পায় বরং দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর পর থেকে সালামের
পূর্ব পর্যন্ত সময়ে শরীক হয় তবে ঈমাম সালাম ফেরানোর পর দাঁড়িয়ে পূর্নাঙ্গ দুই রাকাত আদায় করতে হবে।
মাসবুক ব্যক্তি যদি সাহু সিজদা আবশ্যক হয় এমন কোন ভুল করে ফেলে তবে তাকে সাহু সিজদা করতে হবে। ঈমামের সাথে যদি একবার সাহু সিজদা আদায় করে থাকে অতঃপর যদি আবার ভুল হয় তবে আবার ভুল হয় তবে আবার সাহু সিজদা আদায় করতে হবে। (আহকামে জিন্দেগী)
জামাতে নামাযের প্রতি রসূলুল্লাহ সা.-এর অত্যধিক তাকিদ
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন কসম সেই সত্তার, যার হাতে আমার জীবন! আমার ইচ্ছে হয়, কাঠ-খড়ি জমা করার নির্দেশ দিতে। অতপর যখন সেগুলো কুড়িয়ে একত্র করা হবে, তখন নামাযের আযান দেবার নির্দেশ দিতে। অতপর কোনো
একজনকে ইমামতি করার নির্দেশ দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখতে-কে কে নামায পড়তে আসেনি।” –অপর বর্ণনায় বলা হয়েছে: আমার ইচ্ছে হয়, যারা আযান শুনেও মসজিদে হাযির হয়না, তাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতে।” (বুখারী ও মুসলিম)
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: যদি লোকদের ঘরে নারী ও শিশু না থাকতো, তাহলে আমি যুবকদের আদেশ দিতাম, সেইসব ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতে, যেসব ঘরের লোকেরা ইশার জামাতে হাযির হয়নি। (মুসনাতে আহমদ)
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন একবার এক অন্ধ ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সা.-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার এমন কেউ নেই, যে আমাকে হাত ধরে মসজিদে আনবে।’ অতপর লোকটি মসজিদে উপস্থিত হওয়া থেকে অব্যহতি চায় এবং ঘরে নামায
পড়ার অনুমতি চায়। তিনি তাকে ঘরে নামায পড়ার অনুমতি দিয়ে দেন। অনুমতি পেয়ে লোকটি ফিরে রওয়ানা করে। কিন্তু রসূলুল্লাহ সা. তাকে পুনরায় ডেকে পাঠান। সে ফিরে আসে। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করেন তুমি কি আযান শুনতে পাও? সে বললো জী হ্যাঁ, শুনতে পাই।’ তিনি বললেন: তুমি মসজিদে উপস্থিত
হবে। “সহীহ মুসলিম)
আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন:
কোনো জনবসতি কিংবা কোন জনবিরল এলাকায় যদি তিনজন ব্যক্তিও বাস করে, আর তরা যদি নামাযের জামাত কায়েম না করে, তবে অবশ্যি শয়তান তাদের উপর চড়াও হবে। সুতরাং অবশ্যি তুমি জামাত কায়েম করবে। কারণ দলছাড়া ভেড়া-বকরীকে তো অবশ্যি নেকড়ে তার গ্রাস
বানাবে। (মুসনাতে আহমদ, আবু দাউদ, নাসায়ী)
আবু মূসা আশ‘আরী রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন দুই বা দুইয়ের অধিক লোক হলেই একটি জামাত করতে হবে।” (ইবনে মাজাহ)
উম্মুদ দারদা রা. বলেন, একদিন আবুদ দারদা অত্যন্ত রাগান্বিত অবস্থায় ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কোন জিনি আপনাকে রাগান্বিত করেছে? তিনি বললেন: আল্লাহর কসম, আমি উম্মাতে মুহাম্মদীর পরিচয় ছাড়া আর কিছুই জানিনা যে, তারা সবাই মিলে
জামাতে নামায পড়ে।” (সহীহ বুখারী)
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছৈন: যে ব্যীক্ত আযান শুনলো, অথচ জামাতে হাযির হলোনা, তার নামাযই নাই। তবে কোনো ওযর থাকলে ভিন্ন কথা।” (দারু কুতনি, আবু দাউদ)
জামাতে নামাযের ফযীলত ও মর্যাদা
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: জামাতে নামায পড়ার মর্যাদা একা পড়ার চাইতে সাতাশ গুণ উর্ধ্বে।” (বুখারী মুসলিম)
উব্বাই ইবনে কা’আব রা. থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: নামাযের প্রথম সারি হলো ফেরেশতাদের সারির মতো। তোমরা যদি প্রথম সারির মর্যাদা সম্পর্কে জানতে, তবে তা পাওয়ার জন্যে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তে। মনে রেখো, একা নামায পড়ার চাইতে দুই ব্যক্তির
একত্রে নাময পড়া উত্তম। আর দুই ব্যক্তির একত্রে নামায পড়ার চাইতে তিন ব্যক্তির একত্রে নামায পড়া উত্তম। এভাবে যতো বেশি লোকের জামাত হবে তা আল্লাহর কাছে ততো বেশি প্রিয় হবে।” (আবু দাউদ, নাসায়ী)
আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রা., থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে (জামাতে নামায পড়ার জন্যে) কোনো একটি মসজিদের দিকে পা বাড়াবে, তার প্রতি কদমে আল্লাহ পাক তার জন্যে একটি করে পুণ্য লিখে দেবেন, তার একটি করে মর্যাদা বাড়িয়ে
দেবেন এবং একটি করে পাপ মুছে দেবেন।” (সহীহ মুসলিম)
উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে আমরা জানতে পারলাম, জামাতে নামায পড়ার মধ্যে রয়েছে বিরাট মর্যাদা। অর্থাৎ
১. সাতাশ গুণ বেশি মর্যাদা।
২. মসজিদে যাবার পথে প্রতি কদমে একটি পুণ্য।
৩. প্রতি কদমে একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি।
৪. প্রতি কদমে একটি করে পাপ মোচন।
৫. প্রথম সারিতে দাঁড়ালে ফেরেশতাতুল্য মর্যাদা লাভ।
৬. জামাতে যতো বেশি লোককে শামিল করা যাতে ততো বেশি আল্লাহর ভালবাসা লাভ।
জামাতে হাযির না হওয়া মুনাফিকীর লক্ষণ
উব্বাই ইবনে কা’আব রা. থেকে বর্ণিত, বলেন: রসূলুল্লাহ সা. পর পর দুইদিন ফযর নামাযের সালাম ফিরিয়ে আমাদের জিজ্ঞাসা করেন: অমুক ব্যক্তি কি নামাযে হাযির হয়েছে? সবাই বললো: ‘জ্বী-না।’ তিনি আবার বললেন: অমুক উপস্থিত হয়েছে কি? লোকেরা বললো:
জী-না।’ তিনি বললেন: এই দুইটি (ফযর ও ইশা) নামায মুনাফিকদের জন্যে অন্যান্য নামাযের তুলনায় অধিক ভারী। তোমরা যদি জানতে এই দুইটি নামাযর মধ্যে কী পরিমাণ (সওয়াব) নিহিত আছে, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও নামাযে উপস্থিত হতে।: (আবু দাউদ, নাসায়ী)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেছেন আল্লাহ শপথ, আমি সাহাবিগণকে দেখেছি। (তাঁরা কখনো নামাযের জামাত ত্যাগ করতেন না) জামাত ত্যাগ করে তো কেবল মুনাফিক। নিশ্চয়ই সাহাবিগণের মধ্যে এমন লোকও দেখা গেছে, যাকে দু’পাশ থেকে দুজনে ভর দিয়ে ধরে মসজিদে
এনেছে এবং সফের মধ্যে দাঁড় করিয়েছে। (সহীহ মুসলিম)
উসমা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: মসজিদে আযান হবার পর যে ব্যীক্ত বিশেষ জরুরি কাজ ছাড়া বেরিয় যায় এবং মসজিদে প্রত্যাবর্তনের ইচ্ছা রাখেনা, সে মুনাফিক। (মিশকাত)
ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত আমি দেখেছি সাহাবায়ে কিরামের সমাজকে। সে সমাজে মুনাফিক এবং রোগাক্রান্ত ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই জামাতে উপস্থিত না হয়ে থাকতোনা। (সহীহ মুসলিম)
কুরআন মজীদে বলা হয়েছে, আল্লাহ ভীরু লোক ছাড়া অন্যদের জন্যে নামাযের ভারী বোঝার মতো। অন্যান্য হাদিসে বলা হয়েছে, মুনাফিকরা লোক দেখানোর জন্যে নামায পড়ে। কেউ না দেখলে নামায পড়ে না। কেউ দেখলে বাধ্য হয়ে পড়ে।
জামাত আরম্ভ হলে সুন্নাত নেই
আবু হুরাইর রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: যখন জামাতের জন্যে ইকাতম বলা হবে (অর্থাৎ যখন ফরয নামাযের জামাত আরম্ভ হবে), তখন ঐ (ফরয) নামাযটি ছাড়া আর কোনো নামায নেই’ –কথাটির অর্থ হলো, ফরয নামাযের জামাত দাঁড়িয়ে গেলে আর অন্য কোনো
নামায পড়া যাবেনা।
-এই হাদিসের ভিত্তিতে ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেছৈন: ফরয নামাযের জামাত দাঁড়িয়ে গেলে সুন্নাত নামায ত্যাগ করতে হবে এবং জামাতে শামিল হয়ে যেতে হবে।
ইমাম আবু হানীফা রহ. বলেছেন: ফজরের জামাত এক রাকায়াত পাবার সম্ভাবনা থাকলেও সুন্নাত পড়ে নেয়া যাবে। তবে সফের নিকট থেকে দূরে দাঁড়াতে হবে। তাঁর মতে সফের মধ্যে বা নিকটে দাঁড়ানো মাকরূহ।
হাদিসের বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হাদিস অনুযায়ী জামাতে দাড়িয়ে যাবার পর সুন্নাত নামায পড়ার কোনো অবকাশ দেখা যায় না। কারণ-
-এমন করার অনুমতি রসূলুল্লাহ সা. দেয়নি।
-সাহাবায়ে কিরাম থেকেও এমনটি করা নযীর নেই।
-ফজরের সুন্নতের গুরুত্ব অন্যান্য সুন্নত নামাযের তুলনায় বেশি হলেও সেটা সুন্নতই, ফরয নয়।
-মুয়াযযিনের একামত দেয়ার অর্থই হলো, ইমামের পক্ষ থেকে জামাতে শরীক হবার আহ্বান। আর (ফরয নামাযের জন্যে) ইমামের আহবানে সাড়া দেয়া তো ওয়াজিব।
সুতরাং এ হাদিসটির স্পষ্ট অরথ এবং যুক্তি অনুযায়ী জামাত শুরু হয়ে গেলে সুন্নত পড়ার অবকাশ থাকে না।
মসজিদের জামাতের মহিলাদের হাযির হওয়া
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: তোমাদের কারো স্ত্রী যদি (জামাতে নামায পড়ার জন্যে) মসজিদে আসতে চায়, তবে সে যেনো তাকে বাধা না দেয়। (বুখারী, মুসলিম)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: তোমাদের স্ত্রীদের মসজিদে আসতে বাধা দিওনা। তবে তাদের জন্যে তাদের ঘরে নামায পড়াই উত্তম।” (আবু দাউদ)
-অপর বর্ণনায় এসেছে তোমরা আল্লাহর দাসীদের মসজিদে আসতে বাধা দিও না।”
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সা. বলেছৈন মহিলাদের জন্যে বৈঠককানায় নামায পড়ার চাইতে ঘরের অভ্যন্তরে নামায পড়া উত্তিম েএবং অভ্যন্তরীণ ঘরে নামায পড়ার চাইতে তার প্রকোষ্ঠে নামায পড়া উত্তম।” (আবু দাউদ)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. –এর স্ত্রী যয়নব রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসলুল্লাহ সা. আমাদের বলেছেন: তোমাদের (মহিলাদের) কেউ যখন মসজিদের আসে, তখন সে যেনো সুগন্ধি লাগিয়ে না আসে। (সহীহ মুসলিম)
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন কোনো মহিলা যেনো সুগন্ধি ব্যবহার করে আমাদের সাথে ইশার নামাযে হাযির না হয়। সহীহ মুসলিম)
বিলাল ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. তার পিতা আবদুল্লাহ ইবনে উমরের সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন তোমাদের মহিলারা মসজিদে নামায পড়তে আসতেহ চাইলে তাদের নিষেদ করোনা।” –একথা শুনে বিলাল বললো: আমরা অবশ্যি তাদের মসজিদে
যেতে বাধা দেবো।” এতে হযরত আবদুল্লাহ রাগান্বিত হয়ে ছেলেকে বলেন: আমি তোকে আল্লাহর রসূলের বাণী শুনচ্ছি, আর তুই তার বিরোধিতা করছিঠস? আবদুল্লাহ ইবনে উমরের অপর পুত্র সালেম বলেন: আব্বা মৃত্যু পর্যন্ত বিলালের সাথে কথা বলেননি।” (মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)
তাহাজ্জুদের চাইতে ফজরের জামাতের গুরুত্ব বেশি
আবু বকর ইবনে সুরাইমান ইবনে আবি হাছমা থেকে বর্ণিত একদিন খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব রা. ফজরে জামাতে (আমার পিতা) সুলামিান ইবনে আবি হাছমাকে দেখতে পেলেন না। সেদিন সকালে উমর বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। বাজারের পথেই ছিলো আমার পিতা সুলাইমানের
বাসস্থান। খলিফা আমাদের বাড়িতে এসে আমার দাদী শিফা (বিনতে আবদুল্লাহ) কে জিজ্ঞাসা কজরেন কী ব্যাপার, আজ ফজরের নামাযে (তোমার ছেলে) সুলাইমানকে দেখতে পেলাম না কেন? আমার দাদী বললেন ও রাত জেগে (তাহাজ্জুদ) নামায পড়েছে। ফলে তার চোখে ঘুম চেপে বসেছে (এবং ঘরে নামায পড়ে)
শুয়ে পড়েছে।
একথা শুনে উমর রা. বললেন: আমার কাছে সারারাত জেগে নফল নামায পড়ার চাইতে ফজরের জামাতে হাযির হওয়া অধিক পছন্দনীয়।” (মু’আত্তা ইমাম মালিক)
উমর রা. তাঁর এই বক্তব্য তাহাজ্জুদ বা রাত্রের নফল নামায পড়তে নিরুৎসাহিত করেননি, বরং তিনি এখানে জামাতে নামায এবং নফল নামাযের মধ্যে গুরুত্বের পর্যায় তুলে ধরেছেন। এই হাদিস থেকে জানা গেলো:
১. সুন্নত নামাযের মধ্যে তাহাজ্জুদ বা রাত্রের নামাযের মর্যাদা অনেক বেশি হলেও, ফরয নামায জামাতে পড়ার চাইতে এর মর্যাদা বেশি নয়।
২. ফজরের জামাত মিস হবার আশংকা থাকলে রাত জেগে ইবাদত বন্দেগি বা অন্য কোনো দীনি কাজও করা ঠিক নয়।
৩. এমনকি ফজরের জামাত মিস হবার আশংকা থাকলে রাত জেগে তাহাজ্জুদ নামায পড়াও ঠিক নয়। তবে ফজরের জামাতে হাযির হবার ব্যাপারে আশংকা না থাকলে তাহাজ্জুদ পড়া উত্তম।
জামাতে উপস্থিতির ক্ষেত্রে বিলম্ব ও ব্যতিক্রমের অবকাশ
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। তিন বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি: খাবার উপস্থিত করা হলে এবং পায়খানা-প্রশ্রাবের বেগ সৃষ্টি হলে- এগুলো সেরে নেয়ার আগ পর্যন্ত নামাযে যাবেনা। (সহীহ মুসলিম)
আবদুল্লাহ ইবনে আরকাম রা. থেকে বর্ণিতহ। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. বে বলতে শুনেছি যখন নামাযের ইকামত বলা হয়, তখন যদি তোমাদের কেউ পায়খানা-প্রশ্রাবের বেগ অনুভব করে, তাহলে সে যেনো আগে পায়খানা-প্রশ্রাব সেরে নেয়।” (তিরমিযি, আবু দাউদ,
নাসায়ী, মু’আত্তায়ে মালিক)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন যদি তোমাদের কারো রাতের খাবার উপস্থিত করা হয়, আর তখন নামাযের ইকামত দেয়া হয়, তবে তাড়াহুড়া না করে প্রথমে প্রশান্তির সাথে খেয়ে নেবে (তারপর নামাযে যাবে)। (বুখারি,
মুসলিম)
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন তোমরা খাওয়া বা অন্য কোনো কিচুর জন্যে নামায (অর্থাৎ নামযের জামাত) পিছিয়ে দিও না। (শরহে সুন্নাহ)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন প্রবল শীত ও বৃষ্টির রাত্রে তোমাদের কেউ যদি আযান দেয়, তখন সে যেনো একথাও বলে দেয় আপনারা নিজ নিজ আবাসে নামায পড়ুন।” (বুখারী, মুসলিম)
এই হাদিসগুলো থেকে জানা গেলো:
১. খাবার সামনে এল নামাযের ইকামত দিলেও খেয়ে নামাযে যাওয়া উচিত।
২. পায়খানা-প্রশ্রাব চাপলে নামায শুরু হলেও এগুলো আগে সেরে নিতে হবে।
৩. জামাতের সময় নির্ধারিত থাকলে খাওয়া বা অন্য কারণে জামাত পিছানো ঠিক নয়।
৪. প্রচণ্ড, শীত-বৃষ্টি ও ঝড় তুফানের রাত্রে ঘরে নামায পড়ার অবকাশ আছে।
৫. অন্য হাদিস থেকে জানা যায়, রোগ ও শত্রুর ভয় থাকলে ঘরে নামায পড়ার অবকাশ আছে। (আবু দাউদ, ইবনে আব্বাস রা.)
সফ সোজা করা
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রসূলূল্লাহ সা. বলেছেন:
'তোমরা নামাযের সফ (সারি) সোজা করো। কারণ, সফ সোজা করাটাও নামায কায়েমের অন্তর্ভুক্ত। (বুখারী)
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন:
'তোমরা নামাযের সফ (সারি) সোজা করো। কারণ সফ সোজা করাটাও নামায পূর্ণ করার একটি কাজ। (মুসলিম)
নুমাম ইবনে বশীর রা. থেকে বর্ণিত, রসুল্লাহ সা. তীর সোজা করার মতোই আমাদের (নামাযের) সফ সোজা করে দিতেন। আমাদের সফ সোজা হলে তিনি তকবীর (তাহরীমা) বলতেন। (মুসলিম, আবু দাউদ)
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, একদিন নামাযের ইকামত হলে রসূলুল্লাহ সা. আমাদের দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে বললেন: তোমাদের সফ সোজা করো এবং পরস্পরের সাথে মিলে দাঁড়াও। (বুখারি)
জাবির বিন সামুরা রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছৈন তোমরা ফেরেশতাদের মতো সফ বেঁধে দাঁড়াও যেভাবে তার তাদের প্রবুর কাছে সফ বেঁধে দাঁড়ায়। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম: ইয়া রসূলুল্লা! ফেরেশতারা কিভাবে তাদের প্রভুর সামনে সফ বেঁধে দাঁড়ায়?
তিনি বললেন তারা প্রথমে প্রথম সারিগুলো পূর্ণ করে এবং পরস্পর মিলিত হয়ে দাঁড়ায়। (সহীহ মুসলিম)
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: পুরুষদের সফ সমূহের মধ্যে সর্বোত্তম হলো প্রথম সফ, আর নারীদের সফ সমূহের মধ্যে সর্বোত্তম হলো সর্বশেষ সফ। (সহীহ মুসলিম)
আবদুল্লা ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন তোমাদের মধ্যে যারা বয়স্ক ও বুঝ-সমুজের অধিকারী, তারা যেনো আমার (ইমামের) নিকট দাঁড়ায়। অতপর তারা, যারা তাদের নিকটবর্তী। অতপর তারা, যারা তাদের নিকটবর্তী। সাবধান মসজিদ বাজারের
ন্যায় হৈ চৈ করা থেকে বিরত থাকো। (মুসলিম)
বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, রসূর্লাহ সা. বলতেন:আল্লাহ এবং ফেরেশতাগণ ঐ লোকদের প্রতি সালাত করেন (অর্থাৎ রহমত বর্ষণ ও দু’আ করেন), যারা প্রথম দিকের সফগুলোতে এগিয়ে আসে। আল্লাহর কাছে সেই পা বাড়ানোর চাইতে আর কোনো পা বাড়ানোই এতো অধিক
প্রিয় নয়, যে পা সফ মিলানো ও পূর্ণ করার জন্যে বাড়েঃ। (আবু দাউদ)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: তোমরা সফ সোজা করবে, বাহু বরাবর করবে, ফাঁক পূর্ণ করবে, পরস্পরের বাহু নরম রাখবে এবং মাঝখানে শয়তানের জন্যে জায়গা রাখবেনা। যে ব্যক্তি সফ মিলিয়ে দাঁড়ায়, আল্লাত হাকে মিলিয়ে দেন।
আর যে সফ বিচ্ছিন্ করে আল্লাহ তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেন। (আবু দউদ, নাসায়ী)
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছৈন: প্রথমে পয়লা সফ পূর্ণ করো, তারপর দ্বিতীয় সফ। এভাবে পূর্ণ করে যাও। কোনো অপূর্ণতা থাকে, তবে তা যেনো সর্বশেষ সফে থাকে। আবু দাউদ)
ইমাম ও মুক্তাদি কোথায় দাঁড়াবে?
জাবির রা. থেকে বরিণত, একবার রসূলুল্লাহ সা. (নফল) নামায পড়তে দাঁড়ালেন। আমি এসে তাঁকে তাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম। তখন তিনি (নামায রত অবস্থায়ই) আমার হাত ধরে আমাকে তাঁর বাম পাশে দাঁড় করালেন। এরপর জব্বার ইবনে সখর এতে তাঁর বামপাশে দাঁড়ালেন।
এসময় রসূলুল্লাহ সা. আমাদের দুজনেরই হাত ধরে ঠেলে তার পেছনে এনে দাঁড় করিয় দিলেন। (সহীহ মুসলিম)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিতধ আমি একরাত্রে আমার খালা উম্মুল মু’মিনীন মাইমুনার ঘরে রাত্রি যাপন করি। রাতের এক পর্যায়ে দেখলা, রসূলুল্লাহ সা. (তাহাজ্জুদ) নাময পড়তে দাঁড়ালেন। তখন আমিও উঠে এলাম এবং তাঁর সাথ নাময পড়তে দাঁড়ালাম।
এসময় তিনি পেছন দিক থেকে হাত এনে আমাকে ধরলেন এবং তাঁর পেছন দিক দিয়ে আমাকে টেনে এনে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করিয়ে দিলে। (বুখরী ও মুসলিম)
আনাস রা. থেকে বর্ণিত: একবার রসূলুল্লাহ সা. আমাদের ঘরে আসুন এবং নামাযে দাঁড়ান। আম এবং একটি এতীম ছেলে তাঁর পেছনে দাঁড়াই আর (আমার মা) উম্মে সুলাইম দাঁড়ান আমাদের দুজনের পিছে। (সহীহ মুসলিম)
হুযুইফা রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছৈন তোকনো ব্যাক্তি যখন লোকদের ইমামতি করবে, তখন সে যেনো তাদের (মুক্তাদির) চেয়ে উঁচু জায়গায় না দাঁড়ায়। (আবু দাউদ)
সহল ইবনে সা’আদ রা. থেকে বর্ণিত একবার রসূলূল্লাহ সা. মিম্বরের উপর কিবলামুখী দাঁড়িযে তাকবীরে তাহরীমা বললেন। লোকেরা তাঁর পেছনে দঁড়ালো। তিনি ওখানেই দাঁড়িয়েই কিরাত (পাঠ) করলেন, রুকুও করলেন এবং লোকেরাও তাঁর সাথে রুকু করলো। তারপর তিনি
রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে পেছনে সরে এস মসজিদের মেঝেতে নেমে এলেন এবং সমতল ভূমিতে সাজদা করলেন। সাজদা শেষে আবার মিম্বরে উঠলেন, কিরাত (পাঠ) করলেন, রুকূ করলেন এবং রুকূ থেকে মাথা উঠালেন। অতপর পেছনে সরে এসে সমতল ভূমিতে সাজদা করলেন।
নামায শেষ করে তিনি মুক্তাদিদের লক্ষ্য করে বললেনন হে লোকেরা আমি এজন্য এমনটি করেছি, যাতে তোমরা সঠকভাবে জনে শুনে নামায পড়ার নিয়ম অনুসরণ করতে পারো। (বুখারি, মুসলিম)
উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত: একবার রসূলুল্লাহ সা. আমার কক্ষে (নফল) নামায পড়েন। এসময় লোকেরা আমার কক্ষের বাইরে থেকে তাঁর পেছনে ইকতেদা করে। (আবু দাউদ)
এই হাদিসগুলো থেকে জানা গেলো:
১. ইমামের সাথে মুক্তাদি মাত্র একজন হলে তিনি ইমামের ডান পাশে দাঁড়াবেন।
২. একক মুক্তাদি ভুলবশথ বা অজ্ঞতা বশত ইমামের বাম পাশে দাঁঢ়ালে ইমাম তার হাত ধরে নিজের পেছনে দিয়ে তাকে নিজের ডানপাশে নিয়ে আসবেন।
৩. মুক্তাদি একাধিক হলে তরা ইমামের পেছনে দাঁড়াবেন। অজ্ঞতাবশত তারা ইমামের পাশে দাঁড়ালে ইমাম তাদের পেছনে ঠেলে দেবেন অথবা (সামনে জায়গা থাকলে) নিজে সামনে গিয়ে দাঁড়াবেন।
৪. নফল নামাযও জামাতে পড়া যায়।
৫. কোনো ব্যক্তি ইমাম হিসেবে নামায শুরু না করলেও তার পেছনে একতেদা করা (নামায পড়া) যাবে।
৬. ইমামের পরে পুরুষরা দাঁড়াবে তারপর শেষে মহিলারা দাঁড়াবে।
৭. ইমাম মুক্তাদিদের চাইতে উঁচু জায়গায় দাঁড়াবেন না। রসূল সা. একজার মিম্বরে দাঁড়িয়েছিলেন সাহাবিদের নামায শিখানোর জন্যে। তবে সাজদা করে নিচে নেমে এসে।
৮. ইমাম ঘরের ভেতর আর মুক্তাদিরা বাইরে থাকলে নামাযের ক্ষতি হয়না।
ইমামতি করবে কে?
আবু মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, কোনো সমাজে তাদের ইমামতি করবে সে ব্যক্তি, যে ব্যক্তি তাদের মধ্যে সবার চেয়ে আল্লাহর কিতাব (কুরআন) জানে। আল্লাহর কিতাব জানার ক্ষেত্রে সবাই যদি সমান হয়, তবে ইমামতি করবেচ সে ব্যক্তি,
যে সুন্নাহ সম্পর্কে সবার চেয়ে বেশি অবগত। সুন্নাহ অবগতির ক্ষেত্রেও যদি সবাই বরাবর হয়, তবে তাদের ইমামতি করবে সে ব্যক্তি, যে হিজরতের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে অগ্রবর্তী। হিজরতের ক্ষেত্রেও যদি তারা বরাবর হয়ে থাকে, তবে ইমামতি করবে সে, যার বয়স বেশি।
কেউ যেনো অপর কারো কর্তৃত্বের স্থানে ইমামতি না করে। আর কেউ যেনো অপর করো ঘর বা কার্যালয়ে গিয়ে তার অনুমতি ছাড়া তার নির্দিষ্ট আসনে না বসে। (সহীহ মুসলিম)
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্লিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছৈন: তোমাদের উত্তম লোকেরাই যেনো তোমাদের নামাযের আযান দেয়, আর সর্বাধিক কুরআন জানা লোকেরাই যেনো তোমাদের ইমামতি করে। (আবু দাউদ)
আনাস রা. থেকে বর্ণিত একবার (কোনো এক যুদ্ধে যাত্রার সময়) রসূলূল্লাহ সা. (মদিনায়) লোকদের ইমামতি করার জন্যে আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুমকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যান, অথচ তিনি ছিলেন অন্ধ। (আবু দাউদ)
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রসূলূল্লাহ সা. বলেছৈন তিনজনের নামায তাদের উপর এক বঘতও উঠানো (অর্থাৎ কবুল করা) হয়না। তারা হলো:
১. সেই ব্যক্তি, যে মানুষের ইমামতি করে, অথচ লোকেরা তাকে পছন্দ করে না। (ইবনে মাজাহ)
ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ সা. মদীনায় আসার পূর্বে প্রাথমিক মুহাজিররা যখন মদীনায় পৌঁছলো, তখন তাদের ইমামতি করতো আবু হুযাইফার গোলাম সালিম, অথচ তাদের মধ্যে উমর রা. এবং আবু সালামা ইবনে আবদুল আসাদও বর্তমান ছিলেন। (সহীহ বুখারী)
সালিম রা. কুরআনের বড় জ্ঞানী (আলিম) ছিলেন। রসূল সা. চার ব্যক্তির নিকট থেকে কুরআন শিখতে বলেছিলেন। সালিম রা. ছিলেন এই চার ব্যক্তিরই অন্যতম। মৃত্যুকালে খলিফা উমর রা. বলেছিলেন আজ যদি সালিম বেঁচে থঅকতো, তবে আমি তাকেই পরবর্তী খলিফা বানানোর
প্রস্তাব করতাম। কুরআনের বড় আলিম হবার কারণেই সালিম সাহাবিগণের ইমাম হবার যোগ্যতা অর্জন করেন।
ইমামের কর্তব্য ও সচেতনা
আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, রসূলূল্লাহ সা. বলেছৈন: কখনো কখনো এমন হয় যে, আমি নামায শুরু করি, আর আমার ইচ্ছা থাকে নামায দীর্ঘ করার; কিন্তু তখন আমি কোনো শিশুর কানানা শুনতে পাই আর দ্রুত নামায শেষ করে দিই। কারণ আমি জানি বাচ্চার কান্না
শুনলে তার মায়ের মন উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে। (সহীহ বুখারি)
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: যখন তোমাদর কেউ লোকদের নামায পড়াবে (অর্থাৎ ইমামতি করবে), তখন সে যেনো নামায হালকা (সংক্ষেপ) করে; কারণ, মুক্তাদিদের মধ্যে তো রোগী, দুর্বল ও বৃদ্ধ লোকেরাও থাকে। আর তোমাদের কেউ যখন
একাকী নামায পড়বে, তখন সে যতোটা ইচ্ছা নামায দীরঘ করতে পারে। (বুখারি ও মুসলিম)
কায়েস ইবনে আবি হাযেম বলেন, রসূলুল্লাহ সা.-িএর সাহাবি আবু মাসউদ আনসারী বলেছৈন একদিন এক ব্যক্তি এসে আরয করলো ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কসম, আমি ফজরের নামযে বিলম্বে হাযির হই অমুক (ইমাম) এর কারণ। তিনি আমাদেরকে দীর্ঘ নামায পড়ান।’ আবু
মাসউদ বলেন অতপর দেখলাম, সেদিন রসূলুল্লাহ সা. রাগত ভাষায় উপদেশ দিলেন। তিনি বললেন: তোমাদের কেউ কেউ ইমামতি করতে গিয়ে লোকদের বিরক্ত করে তোলে। তোমাদের যে-ই লোকদের ইমামতি করে, সে যেনো অবশ্যি নামায সংক্ষেপ করে। কারণ মুসল্লিদের মধ্যে তো দুর্বল, বৃদ্ধ িএবং বিভিন্ন
প্রয়োজনের তাকিদে ব্যতিব্যস্ত লোকেরাও থাকে। (বুখারি, মুসলিম)
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন:” যারা তোমাদের নামায পড়াবে, তারা সঠিকভাবে পড়ালে তারা এবং তোমরা সকলেই নেকি লাভ করবে। কিন্তু তারা যদি নামায পড়াবার ক্ষেত্রে ভুলত্রুটি করে, তবে তোমরা নেকি লাভ করবে এবং তারা গুনাহগার
হবে। (সহীহ বুখারি)
মুক্তাদিদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
আনাস রা. থেকে বর্ণিত একদিন রসূলুল্লাহ সা. আমাদের নামায পড়ালেন। নামায শেষ করার পর তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন হে লোকেরা! আমি তোমাদের ইমাম। সুতরাং তোমরা রুকূ, সাজদা, কিয়াম, সালাম ফিরানো- কোনোটাই আমার আগে করোনা। (সহীহ মুসলিম)
আবু হুরাইরা রা. বলেন, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: তোমরা ইমামের আগে যেয়োনা। ইমাম যখন তাকবীর বলবে, তোমরাও তখন তাকবীর বলবে।….. ইমাম রুকূ করলে তোমরাও রুকু করবে।….(বুখারি ও মুসলিম)
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছৈন ইমামকে এ জন্যে ইমাম বানানো হয়, যাতে করে তাকে অনুসরণ করা হয়। তাই ইমাম যখন দাঁড়িয়ে নামায পড়বে, তোমরা তার সাথে দাঁড়িয়ে নামায পড়বে। ইমাম রুকূ করলে তোমরাও তার সাথে রুকূ করো। ইমাম মাথা উঠালে
তোমরাও মাথা উঠাও। ইমাম সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহু’ বললে তোমরা ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলো। (বুখারি)
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: যে ব্যক্তি ইমামের আগেই মাথা উঠায়, সে কি ভয় করেনা যে, আল্লাত তা’আলা তার মাথাকে গাধার মাথায় রূপান্তরিত করে দেবেন! (বুখারি, মুসলিম)
আলূ ও মুয়ায বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন তোমাদের কেউ যখন নামাযে (জামাতে) উপস্থি হবে, তখন সে যেনো তা তা করে, ইমাম যখন যে অবস্থায় যা যা করে। (তিরমিযি)
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে ব্যক্তি ইমামের আগে মাথা নাময় এবং উঠায়, শয়তান তার টিকি ধরে আছে। (মু’আত্তা ইমাম মালেক)
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন তোমরা যদি মসজিদে এসে দেখো আমরা সাজদারত আচি, তবে তোমরাও (সরাসরি) সাজাদ করো। কিন্তু সেই সাজদাওয়ালা রাকাতকে তোমাদের জন্যে এক রাকাত গণ্য করোনা। তবে যে পূর্ণ এক রাকাত গণ্য করোনা। তবে
যে পূর্ণ রাকাত পেয়েছে, সে পুরো নামযই পেয়েছে। (আবু দাউদ)
ইমাম তিরমিয বর্ণনা করছেন, আনাস রা. বলেন, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: যে ব্যক্তি (একাধারে) চল্লিশ দিন প্রথম তাকবীররে (তাকবীর তাহরীমায়) শামিল হয়ে জামাতে নামায পড়েছে, সে দুটি জিনিসের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বলে লেখা হবে:
১. সে দোযখের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
২. সে মানাফিকীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
এক নামায দুই বার পড়া
জাবির রা. থেকে বর্ণিত: মুয়ায বিন জাবাল রা. রসূলুল্লাহ সা. এর সাথে নামায পড়তেন, অতপর নিজ পাড়ায় ফিরে এসে পাড়ার লোকদের একই নামায পড়াতেন। (বুখারি, মুসলিম)
জাবির রা. বর্ণনা করেছেন: মুয়ায রা; রসূলুল্লাহ সা. –এর পিছে ইশারা নামায পড়তেন, তারপর নিজ পাড়ার লোকদের কাছে ফিরে এসে তাদেরকে ইশার নামায পড়াতেন। অথচ এই নামাযটি ছিলো তার জন্যে অতিরিক্ত। (বায়হাকি)
ইয়াযীদ ইবনে আসওয়াদ বর্ণনা করেছেন বিদায় হজ্জের সময় আমি রসূলুল্লাহ সা. এর সাথে মসজিদে খায়েফে ফজরের নামায পড়েছি। তিনি নামায শেষ করে যখন ঘুরে বসলেন, দেখলেন, শেষ প্রান্তে দুই ব্যক্তি তাঁর সাথে নামায না পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি তাদেরকে
তাঁর কাছে ডেকে পাঠান। তাদের যখন আনা হলো, তখন তাদের শরীর কাপছিল। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন কোন্ জিনিস তোমাদেরকে আমাদের সাথে নামায পড়তে বাধা দিয়েছে? তারা বললো ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা আমাদের আবাসে নামায পড়ে এসেছি। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন এমনটি কখনো করোনা। যখন
তোমরা আবাসে নামায পড়ে এসে মসজিদে জামাত দেখতে পাবে, তখন তাদের সাথে নামাযে অংশ নিয়ো। এই নামায হবে তোমাদের জন্য নফল (অতিরিক্ত)। (তিরমিযি, আবু দাউদ, নাসায়ী)
মেহজান রা. বলেন, একবার আমি ঘরে নামায পড়ে আসার কারণে মসজিদে নামায শরু হলে নামায না পড়ে বসে থাকি। নামায শেষে রসূল সা. আমাকে আলাদা বসে থাকতে দেখে বললেন তোমাকে জামাতে নামায পড়তে কিসে বাধা দিয়েছে, তুমি কি মুসলিম নও? আমি বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ!
অবশ্যি আমি মুসলিম। তবে আম ঘরে নামায পড়ে এসেছি। তিনি বলরেন: তুমি ঘরে নামায পড়ে এলেও যখন মসজিদে জামাত দাঁড়াবে দেখবে, তখন জামাতে শরীক হয়ো। (নাসায়ী, মু’আত্তা)
0 Reviews:
Post a Comment