সহীহ নূরানি নামাজ শিক্ষা (একের ভেতর সব)
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
দুই ঈদের ( ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা) নামাজ পড়ার নিয়ম
---===---
ঈদের দিনের করণীয় ঃ
(১)ভোরে খুব তাড়া তাড়ি ঘুম থেকে ওঠা ৷
(১)ভোরে খুব তাড়া তাড়ি ঘুম থেকে ওঠা ৷
(২)গোসল করা ৷
(৩)মেসওয়াক করা।
(৪)সুগন্ধি আতর ব্যবহার করা ৷
(৫)যথা সাধ্য উত্তম পোশাক পরিধান করা ৷
(৬)ঈদুল ফিতিরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে খুরমা বা অন্য কোন মিষ্টিদ্রব্য ভক্ষণ করা। খুরমা বেজোড় খাওয়া উত্তম।
(৭)পায়ে হেটে ঈদগাহে যাতায়াত করা ৷
(৮)ঈদগাহে এক রাস্তায় যাওয়া, অন্য রাস্তা দিয়ে আসা। দুই পথ না থাকলে এক পাশ দিয়ে যাওয়া অন্য পাশ দিয়ে আসা( রাস্তার ডানে চলা)।
(৯)শরীয়ত সম্মত ভাবে সাজ— সজ্জা করা ৷
(১০)ঈদের নামাজ ঈদগাহে পড়া, বিনা ওজরে মসজিদে না পড়া।
(১১)ঈদুল ফিতিরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদকায়ে ফিতির আদায় করা।
(১২)ঈদুল ফিতিরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার সময় অনুচ্চঃস্বরে নিম্নোক্ত তাকবীর বলাঃ
ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪﺍﻛﺒﺮ – ﻻ ﺍﻟﻪ ﺍﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ – ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ ﻭﻟﻠﻪ ﺍﻟﺤﻣﺪ
★বাংলা উচ্চারণঃ
‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু
আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ’।
আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ’।
(১৩)ঈদুল আজহায় উক্ত তাকবীর উচ্চৈঃস্বরে বলতে বলতে যাওয়া।
[ বেহেশতী জেওচ - ৩ : ২৫৯, শরহে তানভীর -১ : ১৩৩ ]
-------------
ঈদের নামায বছরে পড়তে হয় মাত্র দুইবার, ফলে অনেকেই এর নিয়মকানুন একটু গুলিয়ে ফেলেন।
নিয়তঃ
শুরুতে নিয়ত করুন যে আমি আল্লাহর ওয়াস্তে ৬ তাকবিরের সাথে ঈদ উল আযহার এর নাময পড়ছি। নিয়ত আরবিতে করতে হবে এমন কোন নিয়ম নাই। যে যেই ভাষার লোক সেই ভাষাতে নিয়ত করলেই হবে। এমন কি নিয়ত মুখ দিয়ে উচ্চারণ করতে হবে এমন কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নাই।
(সব নামায এর ক্ষেত্রে)
উল্লেখ্য ঈদ এর নামাজ ২ রাকাত পড়তে হয় এবং প্রথম রাকাতে অতিরিক্ত ৩ তাকবির (ছানা পড়ার পর) আল্লাহুয়াকবার বলে হাত বেঁধে নামাযে দাঁড়ালেন এখন আপনাকে শুধু ছানা (সুবহানাকা) পড়তে হবে। তখন থেকে আপনাকে আর কিছু পড়তে হবেনা। ইমাম সাহেব ৩ টি তাকবীর বলবেন আপনি ও ইমাম এর সাথে তাকবীর বলবেন (হাত তুলে তাকবীর বলবেন কিন্তু হাত বাধবেন না) ইমাম সুরা পড়বেন, রুকু করবেন সিজদা করবেন আপনি শুধু রুকু সিজদার তাসবিহ পড়বেন
দ্বিতীয় রাকাতে অতিরিক্ত ৩ তাকবির (সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা পড়ার পর)। এখানেও প্রতি তাকবীরের পর হাত ছেড়ে দিবেন অর্থাৎ হাত বাঁধতে হবেনা। এবার ও ইমাম কে অনুসরণ করুন।
এইবার ৩য় তাকবীর শেষ হলে চতুর্থবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত না বেঁধে রুকুতে চলে যান রুকুর তাসবিহ পড়ুন সিজদাতে গেলে সিজদার তাসবিহ পড়ুন । সিজদা থেকে উঠার পর আত্তাহিয়াতু/ সাল্লি আলা /বারিক আলা/ দুয়া মাসুরা(আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি পড়ুন এবং অপেক্ষা করুন ইমাম সাহেব সালাম ফিরালে আপনিও সালাম ফিরান। জুম্য়ার খুতবার ন্যায় দু’ঈদের খুতবা শোনাও ওয়াজিব। চুপ করে খুতবা শুনতে হয়।
প্রথম রাকাতে অতিরিক্ত ৩ তাকবির (ছানা পড়ার পর)
দ্বিতীয় রাকাতে অতিরিক্ত ৩ তাকবির (সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা পড়ার পর)
মনে রাখার বিষয় হলো:
১. যে তাকবিরের পরে সূরা/ছানা পড়তে হয় সেই তাকবিরের পর হাত বাঁধতে হয়।
২. যে তাকবিরের পরে সূরা/ছানা পড়তে হয় না, সেই তাকবিরের পর হাত বাঁধতে হয় না।
এই দুইটা বিষয় মনে রাখলে হাত বাঁধা বা ছাড়া নিয়ে কোন সমস্যা আর থাকবে না। আসুন একটু বিস্তারিতভাবে দেখি:
১ম রাকাত
তাকবিরে তাহরিমা (১ম তাকবির)।
হাত বাঁধা (কারণ এর পর ছানা পড়তে হবে)।
ছানা পড়া।
১ম অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
হাত ছেড়ে দেওয়া (কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না)।
২য় অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
হাত ছেড়ে দেওয়া (কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না)।
৩য় অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
হাত বেঁধে ফেলা (কারণ এর পর সূরা পড়া হবে)।
সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা মিলানো।
তাকবির দেওয়া।
রুকু করা।
রুকু থেকে দাঁড়ানো।
সিজদায় যাওয়া।
২টি সিজদা করা।
তাকবির দেওয়া (২য় রাকাতের জন্য)।
২য় রাকাত
হাত বেঁধে দাঁড়ানো।
সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা মিলানো।
৪র্থ অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
হাত ছেড়ে দেওয়া (কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না)।
৫ম অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
হাত ছেড়ে দেওয়া (কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না)।
৬ষ্ঠ অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
হাত না বাঁধা (কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না, রুকুতে যেতে হচ্ছে)।
রুকু করা।
রুকু থেকে দাঁড়ানো।
সিজদায় যাওয়া।
২টি সিজদা করা।
শেষ বৈঠক + সালাম ফিরানো।
ঈদের নামাজের কিছু মাসায়িল-
মাসআলাঃ
মাসআলাঃ
রমাদানুল মুবারকের পরে শাওয়ালের প্রথম তারিখ ফজরের পর ২ রাকাত ঈদ-উল-ফিতরের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। এ সালাত মুসাফির, অসুস্থ এবং নারীদের জন্য ওয়াজিব নয়। তবে তারা উপযুক্ত পরিবেশে থাকলে এবং ঈদগাহে আসতে পারলে সাওয়াব পাবে। (বাদায়ে সানায়েফি
তারতীব আল শারইয়ে)
মাসআলাঃ
মাসআলাঃ
ঈদের নামাজ আদায়ের সময় হলো শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখ সূর্য উদয়ের পর থেকে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার আগ পর্যন্ত। তবে বৃষ্টি, আবহাওয়া বা দুর্যোগ পরিবেশ ইত্যাদি কারণে মসজিদেও যদি ঈদের সালাত আদায় করা না যায় তাহলে ২রা শাওয়াল ওজর বশত
ফজর থেকে ঠিক দ্বিপ্রহরের আগ পর্যন্ত আদায় করতে পারবে। দ্বিতীয় দিনও যদি আদায় করতে না পারে তাহলে এ সালাত আদায় করার আর সময় থাকবে না। (আল কাসানী)
মাসআলাঃ
মাসআলাঃ
ঈদের নামাজে অতিরিক্ত তাকবিরগুলো দেয়া ওয়াজিব। ঈদের সালাতে আযান ও ইক্বামত নেই। বাড়তি তাকবিরগুলোর সময় রাফ‘য়ে ইয়াদাইন তথা দুই হাত উঠানো সুন্নাত। ইমাম সাহেব তাকবিরগুলো মধ্যখানে তিন তাসবিহ পরিমাণ অবকাশ দিবেন। যাতে করে (বড় জামায়াতে) মুক্তাদিদের
ইমামকে অনুসরণ করতে কোনো অসুবিধা না হয়।(আল কাসানী)
মাসআলাঃ
মাসআলাঃ
কেউ যদি ঈদের সালাতে অংশগ্রহণে দেরি করে এবং ইমামের সাথে প্রথম রাকায়াতে অংশগ্রহণ করে কিন্তু অতিরিক্ত তাকবিরগুলো পেল না তাহলে প্রথমে তাকবিরে তাহরিমা বাধার পর নিজে নিজে প্রথম রাকায়াতের তাকবিরগুলো দিবে। কিন্তু তাকবিরগুলো দিতে গিয়ে যদি
রুকু হারানোর সম্ভাবনা থাকে তাহলে তাকবিরে তাহরিমার পর তাকবির দিয়ে রুকুতে যাবে এবং তাসবিহ না পড়ে প্রথম রাকায়াতের অতিরিক্ত তাকবিরগুলো রুকুতে পড়বে (তখন তাকবির দিতে রাফ‘য়ে য়াদাইন বা হাত তুলতে হবে না)। এভাবে কেউ যদি দ্বিতীয় রাকাতে অংশগ্রহণ করে এবং অতিরিক্ত তাকবিরগুলো
না পায় বরং রুকু পায় তাহলে রুকুতে রুকুর তাসবিহ না পড়ে দ্বিতীয় রাকায়াতের তাকবিরগুলো পড়বে এবং ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর পর উঠে গিয়ে প্রথম রাকায়াত যেভাবে ইমাম সাহেব আদায় করেছেন সেভাবে আদায় করবে।(তোহফাতুল ফোক্বাহা)
মাসআলাঃ
৯ ই জিলহজ্জ ফজর থেকে শুরু করে ১৩ ই জিলহজ্জ ফজর পর্যন্ত [মোট ২৩ ওয়াক্ত] ফরজ নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব ৷ জামাতের নামায হোক বা একাকী নামায হোক ৷ পুরুষ হোক বা নারী হোক ৷ সকলের বলা ওয়াজিব ৷ আরবী ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ ﻻ ﺍﻟﻪ
ﺍﻻ শেষ পর্যন্ত ৷
মাসআলাঃ
এই তাকবীর উচ্চৈঃস্বরে বলবে তবে মহিলারা নিঃশব্দে বলবে। -[তাহতাবী :২৯৮]
মাসআলাঃ
ঈদের নামায ওয়াজিব ও আদায়ের শর্তাবলী জুমাআর শর্তাবলীর ন্যায় তবে ঈদের নামাযে খুৎবা শর্ত নয়। ঈদের নামায সমাপ্ত হওয়ার পর জুমাআ ‘র ন্যায় দুই খুৎবা পড়া সুন্নাত। (ইমাম সাহেব) অত্র খুৎবার মধ্যে ঐ দিনের উপযুগী সাদকায়ে ফিতির বা কুরবাণীর
আহকাম ও তাকবীরে তাশরীকের বর্ণানা করবেন।
জুমার খুতবার মতো এই খুতবা শোনা মুসল্লিদের জন্য ওয়াজিব। খুতবার সময় কথাবার্তা বলা, চলাফেলা করা, নামাজ পড়া মাকরূহে তাহরিমী।
কারও ঈদের নামাজ ছুটে গেলে কিংবা যে কোনো কারণে নামাজ নষ্ট হয়ে গেলে পুনরায় একাকী তা আদায় বা কাজা করার কোনো সুযোগ নেই। তবে চার বা তার অধিক লোকের ঈদের নামাজ ছুটে গেলে তাদের জন্য ঈদের নামাজ পড়ে নেয়া ওয়াজিব।
জুমার খুতবার মতো এই খুতবা শোনা মুসল্লিদের জন্য ওয়াজিব। খুতবার সময় কথাবার্তা বলা, চলাফেলা করা, নামাজ পড়া মাকরূহে তাহরিমী।
কারও ঈদের নামাজ ছুটে গেলে কিংবা যে কোনো কারণে নামাজ নষ্ট হয়ে গেলে পুনরায় একাকী তা আদায় বা কাজা করার কোনো সুযোগ নেই। তবে চার বা তার অধিক লোকের ঈদের নামাজ ছুটে গেলে তাদের জন্য ঈদের নামাজ পড়ে নেয়া ওয়াজিব।
0 Reviews:
Post a Comment