জুম ' আ নামাজের নিয়ম - SHARIATPUR.BD
SUBTOTAL :

Music

ISLAMIC সহীহ নূরানি নামাজ শিক্ষা
জুম ' আ নামাজের নিয়ম

জুম ' আ নামাজের নিয়ম

ISLAMIC সহীহ নূরানি নামাজ শিক্ষা
Short Description:

Product Description


সহীহ নূরানি নামাজ শিক্ষা (একের ভেতর সব)


সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

জুম ' আ নামাজের নিয়ম


---===---
দ্বীন ইসলাম একতাকে পছন্দ করে। মানুষকে একতার প্রতি আহ্বান করে। বিচ্ছিন্নতা ও ইখতেলাফকে ঘৃণা ও অপছন্দ করে। তাই ইসলাম মুসলমানদের পারস্পরিক পরিচিতি, প্রেমপ্রীতি ও একতার এমন কোন ক্ষেত্র বাদ রাখেনি যার প্রতি আহ্বান করেনি। জুমআর দিন মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। তারা সেদিন আল্লাহর স্মরণ ও গুণকীর্তনে সচেষ্ট হয় এবং দুনিয়াবী কাজ-কর্ম ও ব্যস্ততা পরিত্যাগ করে আল্লাহ প্রদত্ত অপরিহার্য বিধান ফরয নামায আদায় করার জন্য এবং সাপ্তাহিক দারস তথা জুমআর খুতবা -যার মাধ্যমে খতীব ও আলিমগণ কল্যাণমুখী জীবনযাপনের পন্থা ও পদ্ধতি বয়ান করে থাকেন, সমাজের নানা সমস্যা তুলে ধরে ইসলামের দৃষ্টিতে তার সমাধান কী তা উপস্থাপন করেন - শোনার জন্য আল্লাহর ঘর মসজিদে জমায়েত হয়।
সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হলো শুক্রবার। আর শুক্রবারের শ্রেষ্ঠ নামাজ হলো জুমা। জুমার নামাজের বিভিন্ন ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, জুমা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ দিবস। তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি সুন্দর রূপে ওজু করা করে জুমা নামাজ পড়তে আসবে তার পূর্ববর্তী জুমা থেকে বর্তমান জুমা পর্যন্ত সংগঠিত গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যায়।
পবিত্র কুরআনে সূরা আল জুমায় ইরশাদ করা হয়েছে, যখন সালাতের জন্য জুমার দিবসের আহবান জানানো হয়, তখনই আল্লাহকে স্মরণের উদ্দেশে চলে এসো এবং ব্যবসায়িক লেনদেন বন্ধ করে দাও। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানতে।
জুমার দিন যোহরের নামাজের পরিবর্তে দুই রাকাত জুমার নামাজ আদায় করা পত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ।

জুমার দিনের বৈশিষ্ট্য
ইসলামি শরিয়তের বিধানে জুমার দিনের মাহাত্ম্য সীমাহীন। এই দিন মানব জাতির আদি পিতা হজরত আদম আ. এর দেহের বিভিন্ন অংশ সংযোজিত বা জমা করা হয়েছিল বলেই দিনটির নাম জুমা রাখা হয়েছে। জুমার দিনকে আল্লাহপাক সীমাহীন বরকত দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন। এটি সপ্তাহের সেরা দিন। হাদিস শরিফের বর্ণনা অনুযায়ী এই বরকতময় দিনটি আল্লাহপাক বিশেষভাবে উম্মতে মুহাম্মদিকে সা. দান করেছেন।
নবী করিম সা. ইরশাদ করেন, সর্বাপেক্ষা উত্তম ও বরকতময় দিন হচ্ছে জুমার দিন। এই পবিত্র দিনে হজরত আদম আ. কে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এই দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। (মুসলিম শরিফ)

জুমার নামাজের ফজিলত
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘জুমার দিনে মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা দাঁড়িয়ে যান; পর্যায়ক্রমে লেখতে থাকেন প্রথমে আগমনকারীদের ফজিলত। সর্বপ্রথম আগমনকারী একটি উট কুরবানি করার সওয়াব লাভ করেন, পরের জন গরু, তারপরের জন দুম্বা, তারপরের জন মুরগি এবং তারপরের জন ডিম কুরবানি দেয়ার সওয়াব লাভ করেন। অতপর ইমাম যখন মিম্বারে আসেন, তখন তারা খাতা গুটিয়ে রেখে মনযোগ দিয়ে খুৎবা শুনেন। (বুখারি : ৮৭৬, মিশকাত : ১৩৮৪)


আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ * فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

অর্থ: “হে মুমিনগণ! জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে এসো এবং বেচা-কেনা বন্ধ কর, এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ। অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর যাতে তোমরা সফলকাম হও”। (সূরা জুমআ, আয়াত: ৯-১০)

জুমআ প্রতিটি মুক্বীম (বাড়ীতে অবস্থানকারী), আযাদ (স্বাধীন). বালিগ (প্রাপ্ত বয়স্ক) মুসলমানের উপর ওয়াজিব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়মিত জুমআর নামায আদায় করেছেন এবং তিনি জুমআ পরিত্যাগকারী সম্পর্কে কঠোর উক্তি পেশ করে বলেছেন:

لَيَنتَهِيَنَّ أَقْوامٌ عَنْ وَدْعِهِمْ الجمعاتِ أو لَيختُمَنَّ الله على قُلوبِهِمْ ثُمَّ لَيَكُونَنَّ من الغافِلِينَ (مسلم).

অর্থ: “যারা জুমআ পরিত্যাগ করে তাদের অবশ্যই ক্ষান্ত হওয়া উচিত, অন্যথায় আল্লাহ নিশ্চয় তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেবেন। ফলে তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হবে নিশ্চিতরূপেই”। (মুসলিম)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন:

”مَنْ تَرَكَ ثلاثَ جَمَعٍ تَهَاوَناً طَبَعَ الله عَلى قَلْبِهِ“

অর্থ: “যে ব্যক্তি অবহেলা করে তিন জুম্আ পরিত্যাগ করবে আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দেবেন”। জুমআর নামায দুই রাকাত। জুমআর ইমামের পিছনে একতেদা করে জুমআর এ দু’রাকাত নামায আদায় করতে হবে।

জুমআর নামাযের জন্য জামে মসজিদ হওয়া শর্ত। অর্থাৎ যে মসজিদে জুমআর নামায আদায় করা হয়, যেখানে মুসলমানরা একত্রিত হয় এবং তাদের ইমাম তাদেরকে সম্বোধন করে কথা বলেন, নসীহত-উপদেশ দেন, সরল পথ দেখান।
জুম্আর খুতবা চলাকালীন কথা বলা হারাম। এমনকি যদি কেউ তার পাশের ব্যক্তিকে বলে, ‘চুপ থাক’ তাহলেও সে কথা না বলার বিধান ভঙ্গ করল বলে পরিগণিত হবে।

জুমার এক রাকাত ছুটে গেলে
কারো জুমআর এক রাকআত ছুটে গেলে বাকি আর এক রাকআত ইমামের সালাম ফেরানোর পর উঠে পড়ে নিলে তার জুমুআহ হয়ে যাবে। অনুরুপ কেউ দ্বিতীয় রাকআতের রুকূর আগে থেকে পেলেও ওই রাকআত এবং তার সাথে আর এক রাকআত পড়লে তারও জুমুআহ হয়ে যাবে। কিন্তু যদি কেউ দ্বিতীয় রাকআতের রুকূ শেষ হওয়অর পর জামাআতে শামিল হয়, তাহলে সে জুমআর নামাজ পাবে না। এই অবস্থায় তাকে যোহরের ৪ রাকআত আদায়ের নিয়তে জামাআতে শামিল হয়ে ইমামের সালাম ফিরার পর ৪ রাকআত ফরজ পড়তে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, সৌদি উলামা-কমিটি ১/৪১৮, ৪২১)
আর কেউ যদি জুমার নামাজ না পায় বা মসজিদে গিয়ে দেখে জুমা শেষ হয়ে গেছে তবে তাকে জোহর নামাজ পড়তে হবে। কারণ জামাআত ছাড়া জুমার নামাজ হয় না।
হাদিসে এসেছে, ইবনে মাসঊদ রা. বলেন, যে ব্যক্তি জুমার এক রাকআত পেয়ে যায়, সে ব্যক্তি যেন আর এক রাকআত পড়ে নেয়। কিন্তু যে (দ্বিতীয় রাকআতের) রুকূ না পায়, সে যেন জোহরের ৪ রাকআত পড়ে নেয়।’ (ইবনে আবী শাইবা, ত্বাবারানী, বায়হাকী, আলবানী : ৬২১)
কোন ইমাম সাহেব যদি বিনা ওজুতে জুমুার নামাজ পড়িয়ে নামাজের শেষে মনে হয়, তাহলে মুক্তাদির নামাজ সহিহ হয়ে যাবে। আর ইমাম ওই নামাজ কাজা করতে ৪ রাকআত জোহর পড়বেন। (আল-মুন্তাকা মিন ফাতাওয়াল ফাওয়া : ৩/৬৮)

জুমার নামাজ না পড়লে
জুমার নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এ নামাজ ছেড়ে দিলে হাদিসে ভয়াবহ ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি মুসলিমকে অবশ্যই জুমার নামাজ গুরুত্বসহ পড়া উচিত।
জুমার নামাজ প্রত্যেক বালেগ পুরুষের জন্যই ওয়াজিব। হাদিসে এসেছে, হযরত হাফসা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, প্রত্যেক (প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ) মুসলমানের জন্য জুমার নামাজ আদায় করা ওয়াজিব- অপরিহার্য কর্তব্য। (সুনানে নাসায়ী)
রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, যে ব্যক্তি অবহেলা অলসতা করে পর পর তিন জুমা নামাজ ছেড়ে দিল, আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দিবেন। (আবু দাউদ)
আরেক হাদিসে রসূলুল্লাহ সা. বলেন, যে ব্যক্তি কোনো ওজর এবং অনিষ্টের ভয় ছাড়া জুমার নামাজে অংশ গ্রহণ করে না, মুনাফিকের এমন দফতরে তার নাম লিপিবদ্ধ করা হয়, যা কখনো মোছা বা রদবদল করা হয় না।

খুতবা না শুনলে
জুমার খুতবা অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। জুমার খুতবা হলো ওয়াজিব। খুতবা চলাকালীন সময় কোন প্রকার কথা বলা যাবে না। এমনকি কাউকে কথা বলতে দেখে ‘চুপ কর’ এ কথাও বলা যাবে না। কারণ, হাদিসে এ ব্যাপারে নিষেধ এসেছে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ইমামের খুতবা দেয়া অবস্থায় তুমি যদি তোমার সাথীকে বল, তুমি চুপ কর, তাহলে তুমি অনর্থক কথা বললে’।
ইমাম আহমদ তার বর্ণনায় হাদিসে আরও বর্ধিত করেন, অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোন অনর্থক কর্ম করল, তার জন্য ওই জুমায় আর কিছু রইল না।
অনেকে খুতবার সময় নামাজ পড়েন। এটাও হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ যে নামাজ পড়া হচ্ছে সেটি সুন্নত। আর খুতবা শোনা হলো ওয়াজিব। সুতরাং খুতবা শুরু হয়ে গেলে সেটাই শুনতে হবে। সে ক্ষেত্রে সুন্নতগুলো পড়ে পড়তে হবে।


জুমার নামাজের রাকাতের সংখ্যাঃ
চাররাকাত কাবলাল জুময়'আ
দুই রাকাত ফরজ
চার রাকাত বা'দাল জুম'আ

চার রাকাত কাবলাল জুম'আ
বাংলা উচ্চারণঃ
নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকাআতি ছালাতি কাব্‌লাল জুমুয়াতি, সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তয়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্‌ কা’বাতিশ্‌ শারীফাতি আল্লাহু আক্‌বার।
অর্থঃ
আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে চার রাকায়াত কাবলাল জুমা’ সুনাতে মুয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।

জুমা’র দুই রাকাত ফরজ নামাযের নিয়ত
বাংলা উচ্চারণ:
নাওয়াইতু আন্‌ উসকিতা আন্‌ জিম্মাতী ফারদুজ্জহ্‌রি, বি-আদায়ি রাকয়াতাই ছালাতিল্‌ জুমুয়াতি, ফারজুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্‌ কা’বাতিশ্‌ শারীফাতি আল্লাহু আক্‌বার।
অর্থঃ
আমার উপর জুহরের ফরজ নামায আদায়ের যে দায়িত্ব রয়েছে, আমি কেবলামুখী হয়ে, জুমা’র দুই রাকায়াত ফরজ নামায আদায়ের মাধ্যমে তা পালনের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।

চার রাকাত বা'দাল জুম'আ
বাংলা উচ্চারণঃ
নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকাআতি ছালাতি বা'দাল জুমুয়াতি, সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তয়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্‌ কা’বাতিশ্‌ শারীফাতি আল্লাহু আক্‌বার।
অর্থঃ
আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে চার রাকায়াত বা'দাল জুমা'র সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।

জুমা’র নামায যাদের উপর ফরজ ও যাদের উপর নয়
পুরুষের উপর জুমার নামায ফরজ।
বাগেলের উপর জুমার নামায পড়া ফরজ। না-বালেগের উপর বাকি পাঁচ ওয়াক্ত নামায যেমন ফরয নয়, তেমনি জুমা’র নামাযও ফরজ নয়।
মুকিম এর অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজের স্থায়ী বাসস্থানে বা অন্য কোন স্থানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে, তার উপর জুমা’র নামায ফরজ নয়।
যে ব্যক্তি শারীরিক দিক হতে মা’জুর নয়, তার উপর জুমা’ ফরজ। অন্ধ, মাতাল, বেহুঁশ, চলার শক্তিহীন ও রোগে কাতর ব্যক্তি ইত্যাদি মা’জুরের উপর জুমা ফরজ নয়।
যে ব্যক্তি কারও ক্রীতদাস নয়, তার উপর জুমা’র নামায পড়া ফরজ। পরের খরীদা-গোলাম এর উপর জুমা’ ফরজ নয়।
যে সমস্ত ওজরের কারণে জামায়াতে উপস্থিত না হওয়ার অনুমতি রয়েছে, সে সমস্ত ওজরের কোনটি যার নাই, তার উপর জুমা’র নামায ফরজ।

0 Reviews: