ইশরাক্ক / চাশতের ও সালাতুদ্‌ দুহা নামাজ পড়ার নিয়ম - SHARIATPUR.BD
SUBTOTAL :

Music

সহীহ নূরানি নামাজ শিক্ষা
ইশরাক্ক / চাশতের ও সালাতুদ্‌ দুহা নামাজ পড়ার নিয়ম

ইশরাক্ক / চাশতের ও সালাতুদ্‌ দুহা নামাজ পড়ার নিয়ম

সহীহ নূরানি নামাজ শিক্ষা
Short Description:

Product Description


সহীহ নূরানি নামাজ শিক্ষা (একের ভেতর সব)


সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

ইশরাক্ক / চাশতের ও সালাতুদ্‌ দুহা নামাজ পড়ার নিয়ম


---===---
ইশরাক/ চাশত /সালাতুদ্‌ দুহা নামায নফল পর্যায়ের। রাসূলুল্লাহ (সা.) ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতের পর নফল আমলের প্রতি উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন--

‍"আমার বান্দা নফলের মাধ্যমে আমার নিকটবর্তী হতে থাকে। একপর্যায়ে সে আমার মাহবুব ও ভালোবাসার পাত্র হয়ে যায় ...।" (সহীহ বুখারী, ২ : ৯৬৩)

এরূপ নফল নামাযসমূহের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামায ফজীলতের দিক দিয়ে অন্যতম। সেই সাথে ইশরাক, চাশত , সালাতুদ্‌ দুহা ও আউয়াবীন ইত্যাদি সময় সংশ্লিষ্ট নফল নামাযেরও অনেক ফজীলতের বর্ণনা হাদীস শরীফে এসেছে।

এ ধরনের ফজীলতপূর্ণ নফল আমলের কারণে অন্যান্য নবীর উম্মতের তুলনায় এ উম্মতের বয়সসীমা কম হলেও এসব অতিরিক্ত আমলের দ্বারা ছাওয়াব বেশী হওয়ার মাধ্যমে অন্য সকল উম্মতের তুলনায় এ উম্মতের আমলের আধিক্য হবে বলে হাদীসে রয়েছে। তাই নিয়মিত ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাত আমল আদায়ের পর যাদের সময়-সুযোগ হয়, তাদের এ নফল নামায এবং অন্যান্য নফল আমলে তৎপর হওয়া উত্তম নেক কাজ।

ইশরাকের সময় ও তার ফজীলত
ফজরের নামায পড়ার পর দুনিয়ার কাজকর্ম ও কথাবার্তা থেকে বিরত থেকে সূর্য ওঠা পর্যন্ত স্বীয় নামাযের জায়গায় বা (পুরুষগণ) মসজিদে অন্যকোন জায়গায় বসে কুরআন তিলাওয়াত, যিকির-আযকার তাসবীহ-তাহলীল ইত্যাদিতে লিপ্ত থাকবেন। অতঃপর সূর্যোদয়ের ১২/১৩ মিনিট পর সূর্য একটু উপরে উঠলে তখন ইশরাকের সময় হয়। ঐ সময় দুই রাক‘আত ইশরাকের নামায পড়লে এক হজ্ব ও এক উমরার সমান ছাওয়াব লাভ হবে বলে হাদীসে রয়েছে। ((জামে তিরমিযী ১ : ১৩০)
এতব্যতীত আরো দুই রাক‘আতসহ মোট চার রাক‘আত পড়লে আল্লাহ তা‘আলা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার এদিনের সকল কাজের জিম্মাদার হয়ে যান বলে অপর হাদীসে উল্লেখ আছে। (জামি‌ তিরমিযী, ১ : ১০৮)

অবশ্য যদি কেউ ফজরের নামাযের পর দুনিয়াবী কাজে লিপ্ত হয়ে যায় এবং সূর্য ওঠার পর ইশরাক পড়ে, তাও জায়িয আছে। এতেও ইশরাক আদায় হবে।

চাশতের নামাজেরর ওয়াক্ত ও রাকাআত
সূর্য যখন আকাশে এক-চতুর্থাংশের উপরে ওঠে এবং সূর্যের তাপ প্রখর হয়, তখন থেকে দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে চাশতের নামাজের সময়। ৪ হইতে ১২ রাক'আত নামাজ পড়া সুন্নাত। ইহাকে চাশতের নামাজ বলে।

চাশতের নামাজের নিয়তঃ
বাংলা নিয়তঃ
"আমি দুই রাকাআত চাশতের নামাজ আদায় করছি।'
নোটঃ
আরবীতে কিংবা বাংলায় মুখে উচ্চারণ করা জরুরী নয়, বরং যে কোনো ভাষায় মনে মনে নিয়ত করাই যথেষ্ট।

চাশতের নামাজ পড়ার নিয়ম
দুই দুই রাকাআত করে চাশতের নামাজ আদায় করা যায়। যেকোন সূরা দ্বারা এই নামাজ পড়া যায়। উভয় রাকাআতেই সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা মিলাতে হবে এবং আখেরী বৈঠক আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছূরা পড়ে সালাম ফিরাতে হবে।

চাশতের নামাজের ফযিলত সম্পর্কে কতিপয় হাদিস
বুরাইদা (রা) বলেন,
রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) বলেছেন, “মানুষের শরীরে ৩৬০ টি জোড় রয়েছে। অতএব মানুষের কর্তব্য হল প্রত্যেক জোড়ের জন্য একটি করে সদাকা করা।” সাহাবায়ে কেরাম (রা) বললেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! কার শক্তি আছে এই কাজ করার?” তিনি (সা) বললেন, “মসজিদে কোথাও কারোর থুতু দেখলে তা ঢেকে দাও অথবা রাস্তায় কোন ক্ষতিকারক কিছু দেখলে সরিয়ে দাও। তবে এমন কিছু না পেলে, চাশতের দুই রাকা’আত সালাতই এর জন্য যথেষ্ট।” [আবু দাউদ; কিতাবুল ‘আদাব’, অধ্যায়ঃ ৪১, হাদীস নং:৫২২২]

উপরিউক্ত হাদীসটি মুলত চাশতের সালাত বা সালাতুদ্‌ দুহা’র অপরিসীম গুরুত্ব ও মাহাত্ম্যের কথাই তুলে ধরে। এর থেকে আরো বোঝা যায় যে,চাশতের সালাত তথা সালাতুদ্‌ দুহা ৩৬০ টি সাদাকার সমতুল্য। (১) আবু দাউদ শরীফ, ১ম খ-, ১৮২ পৃষ্ঠা। (২) মিশকাত শরীফ, ১ম খ-, ১১৬ পৃষ্ঠা

আবু হোরাইরা (রা) বলেন,
“আমার বন্ধু [মুহাম্মাদ (সা)] আমাকে তিনটি বিষয় আমল করার উপদেশ দিয়েছেনঃ প্রতি মাসের প্রথম তিন দিন রোজা রাখা; চাশতের সালাত (সালাতুদ্‌ দুহা) আদায় করা এবং ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে বিতরের সালাত আদায় করা।” [সহীহ্‌ আল বুখারী; “তাহাজ্জুদ” অনুচ্ছেদ, অধ্যায়ঃ ২, হাদীস নং:২৭৪ এবং সহীহ্‌ মুসলিম; কিতাবুস্‌ সালাত, অধ্যায়ঃ ৪, হাদীস নং:১৫৬০]
চাশতের সালাত (সালাতুদ্‌ দুহা) একটি উপহার স্বরূপ এবং যে এই উপহার পাওয়ার আশা করে,সে যেন এই সালাত আদায় করে। তবে এই সালাত আদায় না করলে কেউ গুনাহ্‌গার হবেনা।

হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত,
নবী করীম (সা.) বলেছেন, সমুদ্রের ফেনার সমান গোনাহ্ হলে মাফ হয়ে যাবে চাশ্তের নামাজ পড়লে। (১) তিরমিযী শরীফ, ১ম খ-, ১০৮ পৃষ্ঠা। (২) ইবনে মাজাহ্, ১ম খ-, ৯৮ পৃষ্ঠা।

আবু সাঈদ (রা) হতে বর্ণিত,
“রাসূল (সা) ততক্ষন পর্যন্ত চাশতের সালাত পড়তে থাকতেন, যতক্ষনে আমরা ভাবতে শুরু করাতাম যে তিনি (সা) এই সালাত আর কখনো বাদ দেবেন না। আবার যখন এই সালাত আদায় করা বন্ধ রাখতেন, আমরা ভাবতাম হয়ত তিনি এই সালাত আর কখনই আদায় করবেন না।” (তিরমিযি)

চাশতের সালাতের রাকা’আতের সংখ্যা ২, ৪, ৮, ১২ পর্যন্ত পাওয়া যায়। মক্কা বিজয়ের দিন দুপুরের পূর্বে আল্লাহ্‌র রাসূল (সা) আলী (রা) এর বোন উম্মে হানী (রা) এর গৃহে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে ৮ রাকা’আত পড়েছিলেন। সংক্ষিপ্তভাবে পড়লেও রুকু’ এবং সিজদায় তিনি পূর্ণ ধীরস্থিরতা বজায় রেখেছিলেন এবং প্রতি দুই রাকা’আত অন্তর সালাম ফিরিয়ে ছিলেন।
[সহীহ্‌ আল বুখারী; “সালাত সংক্ষিপ্তকরন” অনুচ্ছেদ, অধ্যায়ঃ ২, হাদীস নং:২০৭]

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি চাশতের ১২ রাকাত নামাজ আদায় করে তাহলে আল্লাহ্ তা’আলা তার জন্য বেহেশতে স্বর্ণের অট্টালিকা প্রস্তুত করে দেবেন। (১) তিরিমিযী শরীফ, ১ম খ-, ১০৮ পৃষ্ঠা। (২) মিশকাত শরীফ, ১ম খ-, ১১৬ পৃষ্ঠা।


যে ব্যক্তি নিয়মিত চাশতের নামাজ পড়ে তার আর্থিক অভাব-অনটন থাকতে পারে না, রিজিক বৃদ্ধি হয়। নবী করীম (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন দুপুরের পূর্বে উম্মে হানীর গৃহে সংক্ষিপ্তভাবে দুই/দুই রাকাত করে ৮ রাকাত পড়েছিলেন। (১) তিরমিযী শরীফ, ১ম খ-, ১০৮ পৃৃষ্ঠা। (২) আবু দাউদ, ১ম খ-, ১৮২ পৃষ্ঠা।

রাসূল সা. চাশতের নামাজ ৪ রাকাআতও আদায় করেছেন

হযরত মুয়ায রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আয়েশা রাযি. কে প্রশ্ন করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশরাকের নামাজ কয় রাকাআত পড়তেন? আয়েশা রাযি. বললেন, (অধিকাংশ সময়) চার রাকাআত পড়তেন। তবে (কখনো কখনো) বেশিও পড়তেন। (শহীহ মুসলিম হাদিস নং -১৬৯৬)

ইশরাক্ক / চাশ্‌তের সালাত ও সালাতুদ্‌ দুহা আদায়ের উপযুক্ত সময়ঃ
“ইশরাক্ক” এর সালাতই হল “চাশতের সালাত” বা “সালাতুদ্‌ দুহা”। “দুহা” শব্দের অর্থ প্রভাত সূর্যের ঔজ্জল্য, যা সূর্য স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে শুরু হয়। এই সালাত প্রথম প্রহরের পর থেকে দ্বিপ্রহরের পূর্বেই পড়া হয় বলে একে “সালাতুদ দুহা” বা “চাশতের সালাত” বলা হয়। তবে প্রথম প্রহরের শুরুতে পড়লে তাকে “সালাতুল ইশরাক্ক” বলে। এই সালাত বাড়ীতে পড়া মুস্তাহাব। এটি সর্বদা পড়া এবং আবশ্যিক গণ্য করা ঠিক নয়। কেননা, রাসূল (সা) এই সালাত কখনো পড়তেন, আবার কখনো ছেড়ে দিতেন।

শেইখ ইবন বাজ্‌ (র) বলেছেন,
“ইশরাক্ক সালাত শুরু থেকেই চাশতের সালাত হিসেব আদায় হয়ে আসছে।” [ মাজমূ’ ফাতাওয়াহ্‌ আল শেইখ ইবন বাজ্‌, ১১/৪০১ ]

চাশতের সালাতের সময় হচ্ছে, সূর্য একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় উঠার পর থেকে শুরু করে যোহর সালাতের ঠিক পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত।

শেইখ ইবন ঊসাইমীন (র) এর মতে,
” চাশতের সালাত আদায়ের সময় হল সূর্য উঠার ১৫ মিনিট পর থেকে শুরু করে যোহর সালাতের ১০ মিনিট পূর্ব পর্যন্ত।” [ আল-শারহ্‌ আল-মুম্‌তি, ৪/১২২ ]

অতএব, এই পুরো সময়টাই হচ্ছে চাশতের সালাত বা সালাতুদ্‌ দুহা এর সময়।

সূর্যের তাপ যখন প্রখর হতে শুরু করে তখন এই সালাত আদায় করা উত্তম। কেননা,নবী কারীম (সা) বলেছেন,
“এই সালাত (চাশতের সালাত) আদায়ের উত্তম সময় হচ্ছে তখন, যখন সূর্যের তাপ এতোটা প্রখর যে, সদ্য প্রাপ্তবয়স্ক উটও সেই তাপ অনুভব করতে পারে।” [সহীহ্‌ মুসলিম; কিতাবুস্‌ সালাত, অধ্যায়ঃ ৪, হাদীস নং:১৬৩০]
শেইখ ইবন বাজ্ঃ মাজমূ’ ফাতাওয়াহ্‌, ১১/৩৯৫

বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন দিনের এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ, দিনের চার ভাগের একভাগ পার হয় তখন এই সালাত আদায় করা উত্তম। কাজেই, চাশতের সালাত বা সালাতুদ্‌ দুহা আদায় করার উত্তম সময়টি হচ্ছে সূর্যোদয় এবং যোহর সালাতের মধ্যবর্তী সময়টা।
আন্‌নাওয়াবী (র) এর মাজমূ’ ফাতাওয়াহ্‌, ৪/৩৬ এবং আল্‌ মাওসূ’য়াহ্‌ আল ফিক্‌হীয়্যাহ্‌, ২৭/২২৪

0 Reviews: