কছর এবং মুসাফিরের নামায পড়ার নিয়ম - SHARIATPUR.BD
SUBTOTAL :

Music

সহীহ নূরানি নামাজ শিক্ষা
কছর এবং মুসাফিরের নামায পড়ার নিয়ম

কছর এবং মুসাফিরের নামায পড়ার নিয়ম

সহীহ নূরানি নামাজ শিক্ষা
Short Description:

Product Description


সহীহ নূরানি নামাজ শিক্ষা (একের ভেতর সব)


সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

কছর এবং মুসাফিরের নামায পড়ার নিয়ম


---===---
মুসাফির কাকে বলে?
কসর আরবি শব্দ আর এর অর্থ হলো কম করা, কমানো। ইসলামী শরিয়তে কোনো ব্যক্তি যদি কমপক্ষে ৪৮ মাইল (শরিয়তের মাইল ১৯২০ গজে হয়) বা তিন মনজিল বা প্রায় ৮৮ কিলোমিটার দূরত্বে গমন করার ইচ্ছা করে, আর তথায় ১৫ দিনের কম অবস্থান করার নিয়ত করে, তাহলে শহরবাসী নিজ শহরের সীমা ও গ্রামবাসী নিজ ইউনিয়ন বা পৌরসভার সীমা অতিক্রম করার পর থেকে মুসাফির বলে গণ্য হবে। তখন থেকেই নামাজের কসরসহ (সংক্ষিপ্ত) মুসাফিরের অন্যান্য হুকুম তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। শামি : ২/৫৯৯-৬০২, আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৯৪-৯৫।
চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত পড়বে। যেমন- জোহর, আসর, এশা- এটাই হলো সংক্ষেপ করা বা কসর নামাজ। মহান আল্লাহ তায়ালা এই সংক্ষেপ করার মধ্যেই অধিক কল্যাণ রেখেছেন। আল কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-

‘তোমরা যখন জমিনে সফর করবে তখন তোমাদের জন্য নামাজের কসর করায় কোনো আপত্তি নেই।’ (সূরা নিসা-১০)।
” যখন তোমরা ভূমিতে সফর করো তখন নামায সংক্ষিপ্ত করতে গুনাহ নেই । যদি আশঙ্কা হয় যে , কাফিররা তোমাদেরকে কষ্ট দিবে । নিশ্চয়ই কাফিররা তোমাদের স্পষ্ট দুশমন।”[ সূরা নিসা : ১০১ ]

মুসাফির কখন মুকিম হবে?
* যে সীমানা থেকে মুসাফির বলে গণ্য হয়েছিল, সেই সীমানায় প্রবেশের পর থেকেই সে মুকিম হয়ে যাবে। শামি : ২/৬০৪।
* কারো একাধিক আবাসস্থল থাকলে যেকোনো একটির এলাকায় প্রবেশ করলে সে মুকিম হয়ে যাবে। বাদায়েউস সালায়ে : ১/২৮০।
* এ ছাড়া নিজ আবাসস্থল ছাড়া অন্য কোথাও যদি ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি অবস্থানের নিয়ত করে, তাহলে সে মুকিম হয়ে যাবে। হিন্দিয়া : ১/১৪২।
১. কসর শুধু চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজেই হয়ে থাকে। যেমন- জোহর, আসর ও এশার নামাজ চার রাকাতের পরিবর্তে দুই রাকাত পড়বেন।
অতএব, মাগরিব, ফজর এবং সুন্নত ও বিতরের নামাজে কোনো কসর নেই।
২. মুসাফির ইমামতি করলে মুক্তাদিদের আগেই বলে দেবে যে সে মুসাফির এবং দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরাবে আর মুকিম নামাজিরা দাঁড়িয়ে বাকি দুই রাকাত সুরা-কেরাত ছাড়া আদায় করে নেবে।
৩. মুসাফির ব্যক্তি যদি মুকিম ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করে, তাহলে ইমামের অনুসরণে সেও চার রাকাত পড়বে।
৪. মুসাফির অবস্থায় যদি কোনো নামাজ কাজা হয়ে যায়, আর তা বাড়ি ফিরে পড়েন তাহলে কসরই পড়বেন এবং বাড়ি থাকা অবস্থায় কোনো কাজা নামাজ যদি সফরে আদায় করেন তবে তা পূর্ণ নামাজই পড়তে হবে।
৫. প্রত্যেক নামাজের নিয়ত করতে হবে, কোন ওয়াক্তের কসর পড়বেন।
৬. মুসাফির ব্যক্তির ব্যস্ততা থাকলে ফজরের সুন্নত ব্যতীত অন্যান্য সুন্নত নামাজ ছেড়ে দেবেন। তবে ব্যস্ততা না থাকলে সুন্নত পড়া উত্তম।
৭. ১৫ দিন বা তার বেশি থাকার নিয়ত হয়নি এবং আগেই চলে যাবে চলে যাবে করেও যাওয়া হচ্ছে না, এভাবে ১৫ দিন বা তার বেশি দিন থাকলেও কসর পড়বেন।
৮. দুই রাকাত, তিন রাকাত ফরজ এবং ওয়াজিব নামাজ যথাযথভাবে আদায় করতে হবে।
৯. চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজে প্রথম বৈঠকে (দ্বিতীয় রাকাতের পর যে বৈঠক হয়) দরুদ শরিফের 'ওয়ালা আলী মুহাম্মদ' পর্যন্ত পড়ে ফেললে নামাজের শেষে সেজদায়ে সাহু করতে হবে।
১০. মুসাফির ভুলবশত চার রাকাত নামাজ পড়ে ফেললে যদি দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহুদের বৈঠক করে থাকে, তবে নামাজ আদায় হয়ে যাবে। অন্যথায় নয়।
১১. পূর্ণ নামাজের স্থলে অর্ধেক পড়ার মধ্যে কারো কারো মনে এরূপ ধারণা আনাগোনা করে যে বোধ হয় এতে নামাজ পূর্ণ হলো না, এটা ঠিক নয়। কারণ কসরও শরিয়তের নির্দেশ। এ নির্দেশ পালনে গুনাহ হয় না, বরং সওয়াব হয়।
(তাফসিরে মা'আরেফুল কোরআন ও ইবনে কাছির অবলম্বনে)

কসর নামাজের ফজিলত :
কসর নামাজের ফজিলত অপরিসীম। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় বান্দাদের সার্বিক কল্যাণের প্রতি লক্ষ করেই সহজ বিধান দিয়েছেন। ইসলাম এসেছে মানুষের কল্যাণের জন্য। মুক্তির জন্য। আর মুসাফির সফরে অনেক সমস্যায় থাকেন, যে কারণে ইসলাম নামাজের মতো এত বড় ইবাদতেও ছাড় দিয়েছে। ইমামে আজম আবু হানিফা রহ: বলেন, ‘সফরে চার রাকাত নামাজকে দুই রাকাতই পড়তে হবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা এ দুই রাকাতের বিনিময়ে চার রাকাতের সয়াব দেবেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

 يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ 

অর্থ:
“আল্লাহ তোমাদের সহজ চান, কঠিন চান না।” (সূরা আল বাকারাহ, আয়াত: ১৮৫)

ইসলাম একটি সহজ ধর্ম। আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কোন দায়িত্ব অর্পন করেন না এবং এমন কোন আদেশ তার উপর চাপিয়ে দেন না, যা পালনে সে অক্ষম। তাই সফরে কষ্টের আশংকা থাকায় আল্লাহ সফর অবস্থায় দুটো কাজ সহজ করে দিয়েছেন।

এক:
নামায কসর করে পড়া।
অর্থাৎ চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামায দু’রাকাত করে পড়া। অতএব, আপনি সফরকালে যোহর, আসর এবং এশার নামায চার রাকাতের পরিবর্তে দু’রাকাত পড়বেন। তবে মাগরিব ও ফজর আসল অবস্থায় বাকি থাকবে। এ দুটো কসর করে পড়লে চলবে না। নামাযে কসর আল্লাহর তরফ থেকে রুখসত তথা সহজিকরণ। আর আল্লাহ যা সহজ করে দেন তা মেনে নেয়া ও সে অনুযায়ী আমল করা আল্লাহর কাছে পছন্দের বিষয়। যেরূপভাবে তিনি পছন্দ করেন আযীমত (আবশ্যিক বিধান) যথার্থরূপে বাস্তবায়িত হওয়া।

পায়ে হেঁটে, জীব-জন্তুর পিঠে চড়ে, ট্রেনে, নৌযানে, প্লেনে এবং মোটর গাড়িতে সফর করার ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য নেই। সফরের মাধ্যম যাই হোক না-কেন, নামায কসর করে পড়ার ক্ষেত্রে এর কোন প্রভাব নেই। অর্থাৎ শরীয়তের পরিভাষায় যাকে সফর বলা হয় এমন সকল সফরেই চার রাকাতবিশিষ্ট নামায কসর করে পড়ার বিধান রয়েছে।

দুই:
দুই নামায একত্র করে আদায় করা।
মুসাফিরের জন্য দুই ওয়াক্তের নামায এক ওয়াক্তে জমা করা বৈধ। অতএব, মুসাফির যোহর ও আসর একত্র করে অনুরূপভাবে মাগরিব ও এশা একত্র করে পড়তে পারবে। অর্থাৎ দুই নামাযের সময় হবে এক এবং ঐ একই সময়ে দুই ওয়াক্তের নামায আলাদা আলাদাভাবে আদায় করার অবকাশ রয়েছে। যোহরের নামায পড়ার পর বিলম্ব না করে আসরের নামায পড়বে। অথবা মাগরিবের নামায পড়ার পরেই সাথে সাথে এশার নামায পড়বে। যোহর-আসর অথবা মাগরিব-এশা ছাড়া অন্য নামায একত্রে আদায় করা বৈধ নয়। যেমন ফজর, যোহর অথবা আসর মাগরিবকে জমা করা বৈধ নয়।


ইয়া’লা ইবনে উমাইয়া বলেন-
আমি উমর ইবনুল খাত্তাব রাঃ কে জিঙ্গাসা করলাম, (কুরআনে এসেছে) যদি কাফিরদের সম্পর্কে তোমাদের আশঙ্কা হয় যে, তারা তোমাদেরকে কষ্ট দিবে, তাহলে নামায সংক্ষিপ্ত করতে পার। এখন তো এই আশঙ্কা নেই (তাহলে এখনও কি এই বিধান বিদ্যমান রয়েছে?)। উমর রাঃ বললেন , এ প্রশ্ন আমারও ছিল। আমি নিজে রসূল্লালাহ (সঃ) এ বিষয়ে জিঙ্গাসা করেছি। তিনি উত্তরে বলেছেন, ‘ এটা তোমাদের জন্য আল্লাহ তা’আলা প্রদত্ত অবকাশ। অতএব তোমরা তার দান গ্রহন করো।”[সহীহ মুসলিম : ১/২৪১ ]

সফরের দূরত্ব:
কি পরিমান দূরত্বে সফর করলে কসর করা যায় – এ প্রশ্নের উত্তর এই যে ,এ বিষয়ক অধিকাংশ রেওয়ায়েত থেকে বুঝা যায় ৪৮ মাইল বা তার বেশি দূরত্বে সফরের নিয়ত করলে কসর করা যাবে অন্যথায় করা যাবে না। এই রেওয়ায়েত গুলোতে এ প্রসঙ্গে ‘ আরবাআতু বুরুদ ‘ ( ৪ বারীদ) শব্দ এসেছে । আর ১২ মাইলে ১ বারীদ হয়ে থাকে। [ মুখতারুস সিহাহ ] জেনে রাখা ভালো যে , কিলোমিটারের হিসেবে ৪৮ মাইল হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৭৭ কিলোমিটারের সমান।

ইমাম মালেক রহঃ থেকে বর্নিত ,
আমি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) সম্পর্কে জেনেছি যে , তিনি মাক্কা ও তায়েফ , মাক্কা ও আসফান এবং মাক্কা ও জিদ্দার সফরে নামায কসর করতেন ।”

ইমাম মালিক রহঃ বলেন, এ দূরত্ব হচ্ছে ৪ বারীদ। আমার মতে এটাই হলো কসরের দূরত্ব। তিনি আরও বলেন, ‘ নিজ এলাকার বসতি থেকে বের হওয়ার পর কসর আরম্ভ করবে এবং পুনরায় বসতিতে পৌঁছার পর পূর্ন নামায পড়বে। ‘ [মুয়াত্তা মালিক : পৃ-৫২ ] উল্লেখ্য, মাক্কা ও জিদ্দার মধ্যবর্তী দূরত্ব হল ৭২ কিলোমিটার। মাক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী দূরত্ব হলো ৮৮ কিলোমিটার এবং মাক্কা ও আসফানের মধ্যবর্তী দূরত্ব হলো ৮০ কিলোমিটার।
সহীহ বুখারীতে এসেছে-
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) এবং আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত, ‘দূরত্বের সফরে নামায কসর পড়তেন এবং রোযা না রাখার অবকাশ গ্রহন করতেন। [সহীহ বুখারী : ১/১৪৭ ] উল্লেখ্য যে, ৩ মাইলে ১ ফরসখ হয় । তাহলে ১৬ ফরসখে ৪৮ মাইল হয় ।
অন্য এক বর্ননায় এসেছে-
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর কাছে জিঙ্গাসা করা হলো, আরাফার উদ্দেশ্যে মাক্কা ত্যাগ করলে কি পথিমধ্যে নামায কসর করা যাবে? তিনি উত্তরে বললেন, না, তবে আসফান ও জিদ্দা ইত্যাদি স্থানের উদ্দেশ্যে সফর করলে নামায কসর করা যাবে।” [ আত-তালখীসুল হাবীব : ২/ ৪৬ ] মুহাদ্দিসিন ও সালাফে সালেহীনদের মতামত
প্রসিদ্ধ গায়রে মুকাল্লিদ মুফতী মাওলানা আবু সাঈদ শরফুদ্দীন কসরের দূরত্ব বিষয়ক বিভিন্ন বর্ননা আলোচনার পর ‘ফাতওয়ায়ে সানাইয়্যা’ লিখেন, ‘সারকথা এই যে, কসরের দূরত্ব ৪৮ মাইল হওয়াই বিশুদ্ধ, ৯ মাইল হওয়া ভুল।
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,
মুহাদ্দিসিন ও সালাফে সালেহীনদের মত এই যে, ৪৮ মাইল দূরত্বের সফরে নামায কসর করা যাবে, তার কমে নয় ।”
[ ফাতওয়ায়ে সানাইয়্যা :১/৪৬২ ] উপরের বর্ননাগুলো থেকে প্রমানিত হয় যে, নিজ এলাকার বসতি অতিক্রম করার পর থেকে কসরের অবকাশ আরম্ভ হয়। কেননা, রাসূল্লালাহ (সা.) যখন মাক্কার উদ্দেশ্যে সফরের ইরাদা করেছেন তখন মদীনার বাইরে যুলহুলায়ফা নামক স্থানে এসে কসর পড়েছেন।

সফরের সময়সীমা:
সফরে কোনো স্থানে ১৫ দিন বা তার বেশি সময় অবস্থানের নিয়ত করলে পূর্ন নামায পড়তে হবে। আর যদি ১৫ দিনের কম সময় থাকার নিয়ত করে তাহলে কসর করতে হবে । যদি এমন হয় যে, সুনির্দিষ্টভাবে কত দিন অবস্হান করতে হবে তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয় , আর আজ যাব , কাল যাব করতে করতে ১৫ দিনের বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে যায় তবুও কসরই পড়তে থাকবে ।
রাসূল্লালাহ (সা.) থেকে এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন সময়সীমা বর্নিত হয়েছে। তবে সাহাবায়ে কিরাম যেহেতু এগুলোর প্রেক্ষাপট সম্পর্কেও অবগত ছিলেন এবং রাসূল্লালাহ (সা.) এর কর্মপদ্ধতি, বিশেষত রাসূল্লালাহ (সা.) এর পবিত্র জীবনের শেষ আমল ছিল সাহাবীদের সামনে তাই তারা যখন এ সময়সীমা ১৫ দিন নির্ধারণ করেন তখন তা সুন্নাহ থেকে আহরিত হওয়ার বিষয়ে কোনই সন্দেহ থাকে না ।
আল-মুগনী গ্রন্থে এসেছে-
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) ও আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন , ” যদি তুমি কোন স্থানে ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত কর তাহলে পূর্ন নামায আদায় করবে।[আল-মুগনী, ২য় খন্ড, ২৮৮ পৃষ্ঠা, সলাতুল্ মুসাফির]
যরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত –
যে ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত করল সে পূর্ন নামায আদায় করবে।[জামে তিরমিযী : ১/৭১

0 Reviews: