সহীহ নূরানি নামাজ শিক্ষা (একের ভেতর সব)
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
ক্বাযা নামাজ পড়ার নিয়ম
---===---
ফরজ বা ওয়াজিব নামাজ সময় মতো পড়তে না পারলে, সময় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পড়া হলে তাকে কাজা নামাজ বলে। পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ নামাজ ছুটে গেলে কাজা করা ফরজ। এশার নামাজের সময় বিতিরসহ যে কোনো ওয়াজিব নামাজের কাজা করা ওয়াজিব। নফল নামাজ শুরু করার
পর ওয়াজিব হয়ে যায়। কোন কারণে নফল নামাজ নষ্ট হলে অথবা শুরু করার পর কোন কারণে যদি ছেড়ে দিতে হয়, তাহলে তার কাজা করাও ওয়াজিব। সুন্নতে মুয়াক্কাদা এবং নফলের কাজা নেই। তবে ফজরের নামাজ সুন্নত-ফরজ উভয়টা পড়তে না পারলে সুন্নত-ফরজ এক সঙ্গে কাজা করা উত্তম। দুপুরের চার
রাকাত সুন্নত পড়তে না পারলে ফরজের পরও পড়ে নেওয়া যায়। ফরজের পর যে দুই রাকাত সুন্নাত আছে তার আগেও পড়া যায় এবং পরেও পড়া যায়। তবে দুপুরের ওয়াক্ত চলে গেলে কাজা ওয়াজিব হবে না।
জুমা নামাজের কাজা নেই :
জুমা নামাজের কাজা নেই। জুমা পড়তে না পারলে চার রাকাত জোহার কাজা পড়তে হবে।
কাজা নামাজের সময় :
কাজা নামাজ পড়ার কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। যখনই স্মরণ হবে এবং সুযোগ হবে পড়ে নিতে হবে। তবে নিষিদ্ধ সময়গুলোতে মনে পড়লে অপেক্ষা করতে হবে।
দীর্ঘ কাজা হলে :
কারো যদি কয়েক মাস এবং বছর নামাজ কাজা হয়ে যায়, তাহলে তার উচিত কাজা নামাজ একটা অনুমান করে নিয়ে কাজা পড়া শুরু করা। এ অবস্থায় কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম এই যে, সে যে ওয়াক্তের কাজা পড়তে চাইবে সে ওয়াক্তের নাম নিয়ে বলবে যে, অমুক ওয়াক্তের সবচেয়ে প্রথম বা শেষ নামাজ পড়ছি। যেমন কাজা হওয়া নামাজের মধ্যে ফজরের নামাজের কাজা পড়তে চায়। তাহলে বলবে, ফজরের সবচেয়ে প্রথম অথবা শেষ নামাজ পড়ছি। এভাবে পড়তে থাকবে যাতে সকল কাজা নামাজ পুরা হয়ে যায়।
ভ্রমণের সময়ের কাজা :
সফরে যে নামাজ কাজা হবে তা মুকিম হয়ে পড়তে গেলে কসর পড়বে। কসর মানে চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ দুই রাকাত পড়বে। তেমনি মুকিম অবস্থায় কাজা হলে সফরে তা পুরা পড়তে হবে। সূত্র : আল ফিকহুল মুয়াসসার
যে কোন জরুরী কারণে সময়মত নামায পড়তে না পারিলে ঐ নামায অন্য নামাযের পূর্বে আদায় করাকে কাযা নামায বলে। কাযা নামায দুই প্রকার যথা ।
১। ‘ফাওয়ায়েতে কালীল’ অর্থাৎ অল্প কাযা পাঁচ ওয়াক্ত পরিমাণ নামায কাযা হইলে উহাকেই ‘ফাওয়ায়েতে কালীল’ বা অল্প কাজা বলে।
২। ‘ফাওয়ায়েতে কাছির’ অর্থাৎ বেশি কাযা। পাঁচ ওয়াক্তের অধিক যত দিনের নামাযই কাযা হউক না কেন উহাকে ‘ফাওয়ায়েতে কাছির’ বা অধিক কাযা বলা হয়। এ ধরনের কাযা নামায সকল ওয়াক্তিয়া নামাযের পূর্বে পড়িবে ।
কিন্তু,
(ক) কাযার কথা ভুলিয়া গেলে অথবা
খ) ওয়াক্তিয়া নামাযের ওয়াকত সস্কীর্ণ হইয়া গেলে বা
গ) কাযা পাঁচ ওয়াক্তের বেশী হইলে কাযা নামায পরে পড়া যাইতে পারে।
পাঁচ ওয়াক্ত নামায বা তার কম নামায না পড়িয়া থাকিলে তাহার তরতীবের প্রতি লক্ষ্য রাখিতে হইবে। আগের নামায আগে, পরের নামায পরে পড়িতে হইবে। যথঃ কোন ব্যক্তির ফরজ এবং যোহরের নামায তরক হইয়া গিযাছে; এখন আছরের
নামায পড়িবার পূর্বে সর্ব প্রথম ফজরের কাযা তারপর যোহরের কাযা আদায় করিতে হইবে। তারপর আছরের ওয়াক্তিযা নামায আদায় করিবে।
১) ফরয নমাযের কাযা ফরয।
২) ওয়াজিব নামাযের কাযা ওয়াজিব।
৩) সুন্নত নামাযের কাযা পড়িতে হয় না। কিন্তু ফজরের সুন্নতের কাযা আদায় করিতে হইব।
৪) কাযা নামায জামায়াতের সহিত আদায় করিলে ইমাম কেরাত জোরে পড়িবেন। তবে যোহর এবং আছরে চুপে চুপে পড়িবেন।
৫) এক মাস বা তার চেয়ে বেশী দিনের নামায কাযা হইয়া থাকিলে উক্ত পরিমাণ সময়ের কাযা আদায় করিবে এবং তরতীবের প্রতি লক্ষ্য রাখিবে।
৬) জীবনে যে নামায পড়ে নাই বা কত নামায তরক করিয়াছে তাহার হিসাবও নাই। সে যদি এখন কাযা করিতে চায়, তবে প্রথমে নামাযের পূর্বে তরতীব অনুযায়ী কাযা আদায় করিতে থাকিব, ইহাকে ‘ওমরী কাযা’ বলে। ইহাতে অশেষ ছওয়াব আছে।
কাযা নামাযের নিয়ত করিবার সময় নামাযের উল্লেখ করিয়া নিয়ত করিতে হইবে।
এ ব্যাপারে কোরআন-সুন্নাহ থেকে দলিল উল্লেখ করা হলো :
১. পবিত্র কোরআনের সুরায়ে নিসার ১০৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'নিঃসন্দেহে মুমিনদের প্রতি নামাজ অপরিহার্য রয়েছে, যার সময়সীমা নির্ধারিত।'
এ আয়াতে নামাজের সময়সীমা নির্ধারিত হওয়ার বিষয়টি যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, তেমনি নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা না হলে পরবর্তী সময়ে ওই নামাজ কাজা করার বিষয়টিও পরোক্ষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ এটা আল্লাহ তায়ালার ঋণ, আর ঋণ সময়মতো আদায় না করতে পারলে পরবর্তী সময়ে তা আদায় করা জরুরি। যেমন সামনের হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে :
১. পবিত্র কোরআনের সুরায়ে নিসার ১০৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'নিঃসন্দেহে মুমিনদের প্রতি নামাজ অপরিহার্য রয়েছে, যার সময়সীমা নির্ধারিত।'
এ আয়াতে নামাজের সময়সীমা নির্ধারিত হওয়ার বিষয়টি যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, তেমনি নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা না হলে পরবর্তী সময়ে ওই নামাজ কাজা করার বিষয়টিও পরোক্ষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ এটা আল্লাহ তায়ালার ঋণ, আর ঋণ সময়মতো আদায় না করতে পারলে পরবর্তী সময়ে তা আদায় করা জরুরি। যেমন সামনের হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে :
২. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এক মহিলা নবীজি (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমার মা মান্নত করেছিলেন যে তিনি হজ করবেন। কিন্তু তা আদায় করার আগেই তিনি মারা যান। (এখন আমার করণীয় কী?) নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, 'তুমি তোমার মায়ের পক্ষ
থেকে হজ করে নাও। বলো তো, যদি তোমার মা কারো কাছে ঋণী হতেন তুমি কি তার ঋণ পরিশোধ করতে? মহিলা বলল, হ্যাঁ, তখন তার জবাবে নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, তবে তোমরা আল্লাহর ঋণকেও পরিশোধ করো। কেননা, তিনি তাঁর প্রাপ্য পাওয়ার অধিক উপযুক্ত। (সহিহ বুখারি : ১/২৪৯, নাসাঈ : ২/২)
এ হাদিস থেকে স্পষ্ট বোঝা গেল, যে ইবাদাত বান্দার ওপর ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য, তা বান্দার ওপর আল্লাহ তায়ালার পাওনা বা ঋণ। এ ঋণ থেকে দায়মুক্তির পথ হলো তা আদায় করা। যেমনিভাবে মানুষের পাওনা ঋণের নির্ধারিত সময় পার হওয়ার দ্বারা মানুষের ঋণ থেকে দায়মুক্ত হওয়া যায় না, তেমনি নির্ধারিত সময় পার হওয়ার দ্বারা আল্লাহ তায়ালার ঋণ থেকেও দায়মুক্ত হওয়া যায় না। আর শরিয়তে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত নামাজের ব্যাপারে এ মূলনীতি যে পুরোপুরি প্রযোজ্য হবে, জ্ঞানীমাত্রই তা বুঝতে সক্ষম।
৩. এক রাতে নবীজি (সা.) তাঁর সাহাবিদের নিয়ে সফর করছিলেন। শেষ রাতে বিশ্রামের উদ্দেশে সফর বিরতি দিলেন। হজরত বিলাল (রা.)-কে ফজরের নামাজের জন্য জাগিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দিলেন। এর পর সবাই ঘুমিয়ে পড়লেন। এদিকে হজরত বিলাল (রা.)ও তন্দ্রাবিভূত হয়ে গেলেন। ফলে সবার ফজরের নামাজ কাজা হয়ে গেল। নবীজি (সা.) ঘুম থেকে জেগে সূর্য ওঠার কিছুক্ষণ পর সবাইকে নিয়ে ফজরের নামাজ কাজা করলেন। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ঘুম বা বিস্মৃতির কারণে যার নামাজ ছুটে গেল, যখন সে জাগ্রত হবে, তখন সে যেন তা আদায় করে নেয়। (বুখারি : ৫৯৭, মুসলিম : ৬৮১)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, সেই দুই রাকআত যা নবীজি (সা.) কাজা হিসেবে আদায় করেছেন, আমার কাছে তা গোটা দুনিয়ার মালিকানা লাভ করার চেয়েও অধিক পছন্দনীয়। (মুসনাদে আহমাদ : ৪/১৮১, মুসনাদে আবী ইয়ালা : ৩/২২-২৩, ২৩৭১)
৪. খন্দকের যুদ্ধ থেকে ফেরার দিন নবীজি (সা.) তাঁর সাহাবিদের বনু কোরাইজা অভিমুখে পাঠানোর সময় বললেন, 'তোমাদের কেউ যেন বনি কোরাইজায় না পৌঁছে আসরের নামাজ না পড়ে।' (সহিহ বুখারি: ১/১২৯, ৪১১৯, সহিহ মুসলিম : ২/৯৬)
৪. খন্দকের যুদ্ধ থেকে ফেরার দিন নবীজি (সা.) তাঁর সাহাবিদের বনু কোরাইজা অভিমুখে পাঠানোর সময় বললেন, 'তোমাদের কেউ যেন বনি কোরাইজায় না পৌঁছে আসরের নামাজ না পড়ে।' (সহিহ বুখারি: ১/১২৯, ৪১১৯, সহিহ মুসলিম : ২/৯৬)
সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রওনা হলেন। পথে আসরের নামাজের সময় অতিবাহিত হওয়ার উপক্রম হলে কিছু সাহাবি পথেই সময়ের ভেতর আসর পড়ে নেন। আর কিছু সাহাবি বনি কোরাইজায় পৌঁছার পর আসরের নামাজ কাজা পড়েন। নবীজি (সা.) এই ঘটনা শুনলেন। কিন্তু পরে কাজা আদায়কারীদের
এ কথা বলেননি যে নামাজ শুধু নির্ধারিত সময়েই আদায়যোগ্য। সময় অতিবাহিত হওয়ার পর এর কোনো কাজা নেই।
সুতরাং এ হাদিস থেকে পরিষ্কার বোঝা গেল, কোনো কারণে নামাজ ওয়াক্তমতো না পড়তে পারলে সেই নামাজ অবশ্যই কাজা পড়তে হবে। এ কারণে যারা কাজা পড়েছিলেন নবীজি (সা.) তাদের সমর্থন করেছিলেন।
৫. স্বয়ং নবীজি (সা.)-এর খন্দকের যুদ্ধের সময় কয়েক ওয়াক্ত নামাজ কাজা হয়ে গিয়েছিল। তথা যুদ্ধের কারণে সময়মতো পড়া সম্ভব হয়নি। এসব নামাজ তিনি কাজা হিসেবে পড়ে নিয়েছিলেন। (বুখারি : ১/১৬২, ২/৩০৭)
৬. এ প্রসঙ্গে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হলো ইজমায়ে উম্মত। মুসলিম উম্মাহর সব মুজতাহিদ ইমাম এ ব্যাপারে একমত, ফরজ নামাজ নির্ধারিত সময়ে আদায় করা না হলে সময়ের পর তা কাজা করতে হবে। এ ব্যাপারে ইচ্ছাকৃতভাবে কাজা করা বা কোনো ওজরে কাজা হয়ে যাওয়া উভয় প্রকারের বিধানই সমান। যেমন মালেকি মাজহাবের সুপ্রসিদ্ধ ইমাম ইবনে আবদুল বার (রহ.) বিনা ওজরে অনাদায়কৃত নামাজ কাজা করা অপরিহার্য হওয়ার সপক্ষে শরয়ি প্রমাণাদি উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, 'ফরজ রোজার মতো ফরজ নামাজও সময় অতিবাহিত হওয়ার পর কাজা করতে হয়। এ ব্যাপারে যদিও উম্মতের ইজমাই যথেষ্ট দলিল। যার অনুসরণ করা ওইসব বিচ্ছিন্ন মতের প্রবক্তাদের জন্যও অপরিহার্য ছিল। তার পরও কিছু দলিল উল্লেখ করা হলো- যথা নবীজি (সা.)-এর বাণীগুলো.(আল ইসতিজকার : ১/৩০২-৩০৩)
এ ছাড়া হাদিসের প্রত্যেক কিতাবে 'বাবু কাজাইল ফাওয়ায়েত' তথা ছুটে যাওয়া নামাজ কাজা করার অধ্যায় নামে কাজা নামাজ পড়ার পদ্ধতির ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। কাজা নামাজ আদায় করা জরুরি হওয়ার ব্যাপারে এটাও মজবুত প্রমাণ। তা ছাড়া এ ব্যাপারে আরো অনেক হাদিস ও সাহাবা কেরামের ফতোয়া রয়েছে। বেশি দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কায় এখানে শুধু একটি আয়াত ও কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো। এর দ্বারাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, কাজা নামাজ আদায় করা জরুরি। এ ব্যাপারে উম্মতের নির্ভরযোগ্য ওলামায়ে কেরাম একমত। তার পরও আমাদের কিছু দ্বীনি ভাই যারা নিজেদের 'আহলুল হাদিস' বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন, তাঁরা কাজা নামাজ আদায়ের বিধানকে সহিহ হাদিসের খেলাফ মনে করেন এবং মুসলিম জনসাধারণকে কিছু হাদিসের বাহ্যিক অর্থ দ্বারা বিভ্রান্ত করে থাকেন। এ সম্পর্কে তাঁরা যেসব দলিল পেশ করে থাকেন, তা নিম্নরূপ :
১. নবীজি (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি নামাজ ছেড়ে দিল, সে কাফের হয়ে গেল।' আর অন্য এক হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, 'ইসলাম গ্রহণ করলে অতীত গুনাহগুলো আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন। অনুরূপভাবে হিজরত করলেও হিজরতের পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।'
সুতরাং এ হাদিস থেকে পরিষ্কার বোঝা গেল, কোনো কারণে নামাজ ওয়াক্তমতো না পড়তে পারলে সেই নামাজ অবশ্যই কাজা পড়তে হবে। এ কারণে যারা কাজা পড়েছিলেন নবীজি (সা.) তাদের সমর্থন করেছিলেন।
৫. স্বয়ং নবীজি (সা.)-এর খন্দকের যুদ্ধের সময় কয়েক ওয়াক্ত নামাজ কাজা হয়ে গিয়েছিল। তথা যুদ্ধের কারণে সময়মতো পড়া সম্ভব হয়নি। এসব নামাজ তিনি কাজা হিসেবে পড়ে নিয়েছিলেন। (বুখারি : ১/১৬২, ২/৩০৭)
৬. এ প্রসঙ্গে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হলো ইজমায়ে উম্মত। মুসলিম উম্মাহর সব মুজতাহিদ ইমাম এ ব্যাপারে একমত, ফরজ নামাজ নির্ধারিত সময়ে আদায় করা না হলে সময়ের পর তা কাজা করতে হবে। এ ব্যাপারে ইচ্ছাকৃতভাবে কাজা করা বা কোনো ওজরে কাজা হয়ে যাওয়া উভয় প্রকারের বিধানই সমান। যেমন মালেকি মাজহাবের সুপ্রসিদ্ধ ইমাম ইবনে আবদুল বার (রহ.) বিনা ওজরে অনাদায়কৃত নামাজ কাজা করা অপরিহার্য হওয়ার সপক্ষে শরয়ি প্রমাণাদি উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, 'ফরজ রোজার মতো ফরজ নামাজও সময় অতিবাহিত হওয়ার পর কাজা করতে হয়। এ ব্যাপারে যদিও উম্মতের ইজমাই যথেষ্ট দলিল। যার অনুসরণ করা ওইসব বিচ্ছিন্ন মতের প্রবক্তাদের জন্যও অপরিহার্য ছিল। তার পরও কিছু দলিল উল্লেখ করা হলো- যথা নবীজি (সা.)-এর বাণীগুলো.(আল ইসতিজকার : ১/৩০২-৩০৩)
এ ছাড়া হাদিসের প্রত্যেক কিতাবে 'বাবু কাজাইল ফাওয়ায়েত' তথা ছুটে যাওয়া নামাজ কাজা করার অধ্যায় নামে কাজা নামাজ পড়ার পদ্ধতির ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। কাজা নামাজ আদায় করা জরুরি হওয়ার ব্যাপারে এটাও মজবুত প্রমাণ। তা ছাড়া এ ব্যাপারে আরো অনেক হাদিস ও সাহাবা কেরামের ফতোয়া রয়েছে। বেশি দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কায় এখানে শুধু একটি আয়াত ও কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো। এর দ্বারাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, কাজা নামাজ আদায় করা জরুরি। এ ব্যাপারে উম্মতের নির্ভরযোগ্য ওলামায়ে কেরাম একমত। তার পরও আমাদের কিছু দ্বীনি ভাই যারা নিজেদের 'আহলুল হাদিস' বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন, তাঁরা কাজা নামাজ আদায়ের বিধানকে সহিহ হাদিসের খেলাফ মনে করেন এবং মুসলিম জনসাধারণকে কিছু হাদিসের বাহ্যিক অর্থ দ্বারা বিভ্রান্ত করে থাকেন। এ সম্পর্কে তাঁরা যেসব দলিল পেশ করে থাকেন, তা নিম্নরূপ :
১. নবীজি (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি নামাজ ছেড়ে দিল, সে কাফের হয়ে গেল।' আর অন্য এক হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, 'ইসলাম গ্রহণ করলে অতীত গুনাহগুলো আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন। অনুরূপভাবে হিজরত করলেও হিজরতের পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।'
সুতরাং ওই দুই হাদিসের আলোকে এ কথা প্রতীয়মান হয়, নামাজ পরিত্যাগ করার কারণে মুসলমান কাফের হয়ে যায়। এখন আবার মুসলমান হওয়া তার কর্তব্য। যখন সে আবার মুসলমান হয়ে যাবে, তখন তার কাজা নামাজ আদায় করার প্রয়োজন নেই। কারণ মুসলমান হওয়ার দ্বারা আগের সব গুনাহ মাফ হয়ে গেছে। অথচ নবীজি (সা.)-এর যুগ থেকে আজ পর্যন্ত কোনো ইমাম বা হাদিস ব্যাখ্যাকারী এ হাদিস দুটির এ জাতীয় ব্যাখ্যা করেননি। একমাত্র আহলে হাদিস ভাইয়েরাই এই ব্যাখ্যা করেছেন। এ উভয় হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
প্রথম হাদিসের ব্যাখ্যা হলো, যে ব্যক্তি নামাজ পরিত্যাগ করল, তার এ কাজটি যেন কাফেরদের কাজের মতো হলো। কিন্তু লোকটি এর দ্বারা কাফের হবে না। দ্বিতীয় হাদিসের ব্যাখ্যা হলো, কোনো অমুসলিম মুসলমান হলে আল্লাহ তায়ালা মেহেরবানি করে তার অতীত গুনাহগুলোকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু কোনো ইমাম এ অর্থ করেননি যে কোনো মুসলমান নামাজ ত্যাগ করে কাফের হয়ে আবার মুসলমান হলে তার পেছনের কাজা নামাজ পড়া লাগবে না। বরং আগে উল্লিখিত আয়াত, হাদিস ও ইজমায়ে উম্মত দ্বারা এই কথাই প্রমাণিত হলো যে উমরি কাজা নামাজ আদায় করা তেমনি ফরজে আইন, যেমনটি সময়মতো আদায় করা ফরজে আইন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ওই বিধানের ব্যাপারে যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। ( খলিফা, আল্লামা আবরারুল হক হারদুঈ (রহ.) থেকে সংগ্রহীত) )
0 Reviews:
Post a Comment